অমিত বিশ্বাস
শক্তি উপাসনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা অতি প্রাচীনকাল থেকেই উল্লেখ্য। এখানেই সিদ্ধপীঠ তথা বক্রেশ্বর শক্তিপীঠ অবস্থিত । “পীঠমালামহাতন্ত্র” শাস্ত্রে লিখিত আছে :
বক্রেশ্বর মনঃ পাতু দেবী মহিষমর্দিনী
ভৈরব বক্রনাথস্তু নদী তত্র পাপহরা ।
উক্ত শাস্ত্র মতে দেবী সতীর মন এইস্থানে পড়েছিলো বলে বলা হয় । দেবীর নাম মহিষমর্দিনী , ভৈরব হলেন বক্রেশ্বর । পাপহরা বক্রেশ্বর নদীর পাশে এই পীঠ অবস্থিত । “শিবচরিত” মতে এইস্থানে দেবীর দক্ষিণ বাহু পতিত হয়েছিলো। দেবীর নাম বক্রেশ্বরী ভৈরব হলেন বক্রেশ্বর । তবে এখানে দশভুজা মহিষাসুরনাশিনী চন্ডী রূপে দেবীর পূজা হয় । মহিষাসুরকে বধ করে দেবীর একনাম হয়েছিলো মহিষমর্দিনী । এই পীঠ শিবভক্তির জন্য বিখ্যাত । মহামুনি অষ্টবক্র মুনি এইস্থানে শিব উপাসনা করেছিলেন। “ব্রহ্মান্ড পুরাণে” এর বর্ণনা আছে ।
“ক্রোধ” হলো মহা শত্রæ। ক্রোধের জন্য অনেক সর্বনাশের পথ উন্মোচন হয়। পুরাণ গুলিতে সেই তত্ত¡ কথাই নানান গল্পে প্রকাশিত হয়েছে বারবার। সেটা সমুদ্র মন্থনের পরবর্তী ঘটনা। মা ল²ীর সাথে ভগবান বিষ্ণুর বিবাহের আয়োজন চলছে । সমস্ত মুনি ঋষি গণ আমন্ত্রিত। এমন সময় ঋষি লোমশ ও ঋষি সুব্রত সেই বিবাহে যোগদান করতে এসেছেন। দেবরাজ ইন্দ্রদুই ঋষিকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে প্রথমে লোমশ মুনিকে পাদ্যঅর্ঘ্য দিলেন। এতে মুনি সুব্রত ক্রুদ্ধ হলেন, তিনি ভেবেছিলেন মহেন্দ্র প্রথমে তাঁকে আপ্যায়ন করবেন। মুনি ইন্দ্রদেবতাকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলেন। শাপ দিতে গিয়ে তাঁর বিবেকবোধ জাগ্রত হলো, তিনি বুঝলেন ঋষির কর্তব্য ক্রোধের ওপর বিজয় প্রাপ্তি করা। মুনি সুব্রত ক্রোধকে নিয়ন্ত্রন করতে গেলে তাঁর শরীর আট অংশে বক্র হোলো- সেই থেকে তিনি অষ্ট বক্র নামে পরিচিত হলেন। এরপর মহামুনি তীর্থ ভ্রমণে বের হলেন। বর্ধমানে এসে কালী উপাসনা শুরু করলেও দেবী তাঁকে ক্ষমা করলেন না। অষ্টবক্র মুনি এরপর বক্রেশ্বরে এসে ভগবান শিবের উপাসনা শুরু করলেন। ভগবান শিব প্রসন্ন হয়ে দর্শন দিয়ে তাঁকে স্বাভাবিক সুস্থ করলেন। মহেশ্বর বরপ্রদান করে বললেন- “তোমার নামের সাথে বক্রেশ্বর শিব নামে আমি পূজিত হবো এখানে। আমার অগ্রে এখানে তোমার পূজা হবে।” এই থেকে এখানে মহামুনি অষ্টবক্রের নামে একটি শিবলিঙ্গ স্থাপন হোলো। ভৈরবের আগে এখানে মহামুনির পূজা হয়।