সজীব সরকার
নানাবিধ অন্যায়-অনাচারে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অন্যের সম্পত্তি দখল, পেশাজীবীদের মধ্যে দুর্নীতি, অন্যের ওপর নির্যাতন বা হত্যা বা ধর্ষণের মতো অপরাধ এখন প্রতিদিনের খবরের বড় অংশ। নেতিবাচক কর্মকা-কে নিরুৎসাহিত করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে এমন অনেক পাঠ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এগুলো খুব কাজে আসছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তাহলে এসব পাঠের প্রয়োজন কী? পরিবার আসলে মানুষের প্রথম কেবল নয়, সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র। একটি পরিবারের পরিবেশ একজন ব্যক্তির জীবনের ওপর যতোটা প্রভাব রাখতে সক্ষম, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ততোটা সক্ষম নয়। একটি শিশু বেড়ে ওঠার সময় পরিবারে যদি প্রতিটি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার স্পষ্ট চর্চা দেখতে পায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ওই শিশুটি নিজের মধ্যে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা নিয়েই বেড়ে ওঠবে।
বাবা-মায়ের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার প্রদর্শন শিশুর মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রতিই শ্রদ্ধার বোধ বাড়াবে। বাবা-মায়ের মধ্যে সন্তানের প্রতি যথাযথ মনোযোগ ও সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার চর্চা থাকলে শিশুদের মধ্যে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া ও শ্রদ্ধা করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। অনেক পরিবারেই নারীরা যথাযথ মর্যাদা পায় না। পরিবারে নিজের মা কিংবা বোনসহ অন্য নারী আত্মীয়-পরিজনদের প্রান্তিক ও মর্যাদাহীন অবস্থান দেখে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে বিশেষ করে ছেলেশিশুরা নারীর প্রতি একই রকমের তাচ্ছিল্যপূর্ণ, ভ্রান্ত ও অমর্যাদাকর ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরিবারের মধ্যে নারীর অবস্থান ও মর্যাদার শক্ত ভিত গড়ে তোলা দরকার, না হলে ঘরের বাইরে নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক ও নৈতিক জীবনাচারের চর্চা থাকলে ওই পরিবারের একটি শিশুর নিপীড়ক বা দুর্নীতিপরায়ন হয়ে বেড়ে ওঠার ঝুঁকি থাকবে না। নানাবিধ গবেষণা বলে, একজন ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবারের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা জন্ম নেয়ার পর প্রথম পাঠ সে পরিবারেই পায়। পরিবারের বড় সদস্যদের অনুকরণের মধ্য দিয়েই একটি শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ শুরু হয়। তাই পরিবারকেই হতে হবে ব্যক্তির নৈতিক শিক্ষাকেন্দ্র।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক; জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ; স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।