আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল : রীতা দেওয়ান নামে একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখেছিলাম। ক্ষুব্ধদের বড় অংশেরই জারি গান, পালা গান বা বাহাস সম্পর্কে ধারণা নেই। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টিতে যারা ভ‚মিকা রেখেছে, তারা ঠিকই জানে রীতা দেওয়ানের অপরাধ কতোটা। মোল্লা গোষ্ঠিকে অপছন্দ করি কারণ তারা জেনে ও বুঝে ভিন্ন মতাদর্শের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজ করতে দ্বিধা করে না। [১] ডিজে আজহারি যেসব আপত্তিকর কথা বলেছে, সেগুলোর ভিডিও দিলেই ছাগুরা বলবে- কাটছাঁট ভিডিও, পুরা ভিডিও দেন। তাদের মনোভাব এমন যে, পুরা ভিডিও দিলে দেখা যাবে আজহারি অন্য কাউকে বুড়ি, ইনটেক্ট না, মদখোর ইত্যাদি বলেছে। অনেকে হাদিস খুঁজে বাতিল হাদিসের সূত্র উল্লেখ করে বলে, আজহারি সঠিক বলেছে, আলী মদ খেয়ে নামাজ পড়েছেন। [২] কিছুদিন আগে বাবুনগরীর একটি ভিডিওর অংশ প্রকাশ হয়েছিল যেখানে তাকে রাসুলের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায়। আসলে সেটি অংশবিশেষ ছিলো। সমালোচকরা কী বলে সেটাই তার বক্তব্য ছিল। তবে সে যা বলেছে তেমন আপত্তিকর কথা সমালোচকরা কখনো বলেনি। রীতা দেওয়ান যা বলেছে তা ডিজে আজহারির শ্রেণিতে পড়ে না, বাবুনগরীর শ্রেণিতে পড়ে। আমরা ডিবেট বা বিতর্কের আধুনিক ও আন্তর্জাতিক রূপটি চিনি। কিন্তু এর শেকড় আবহমানকালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে প্রোথিত। ধর্ম নিয়ে যুক্তি বা তর্ক বিতর্কের পথটি মোল্লারা রুদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের অনেক মেধাবী ধর্মবিদরা ধর্ম সংশ্লিষ্ট সমালোচনাগুলোর জবাব দেয়। আনসারিং ক্রিশ্চিয়ানিটি, আনসারিং ইসলাম এমন বেশকিছু কমিউনিটি রয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাদের গবেষণার অনেক কিছু আলেমরা গ্রহণ করলেও, সেই সব গবেষকরা কখনো আলেমের স্বীকৃতি পায় না। উচ্চ শিক্ষিত অংশটি ইন্টারনেট ভিত্তিক যা করছে সেটিই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে পালা গানে। বিতর্ক প্রতিযোগিতার মতো পালা গানে বিভিন্ন বিষয়ে দুই পক্ষের বাহাস হয়। যেমন: এক পক্ষ হয়তো প্রশ্ন তুলবে আদমকে দোষী হতে হলে শয়তানকে কেন সৃষ্টি করা হলো। যে শিল্পী এ প্রশ্ন তুলছে সে কল্পনাতেও আল্লাহ সম্পর্কে এমন মনোভাব পোষণ করে না। তার উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেয় বাহাসের দ্বিতীয় পক্ষ। সাধারণভাবে ধর্ম নিয়ে যেসব সমালোচনা হতে পারে, সেগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব দেওয়া হয় বাহাসে। বাহাস শুধু ধর্ম কেন্দ্রিক নয়, নারী পুরুষ তৈরির কি দরকার ছিল – এমন বহু বিষয়ে উপভোগ্য বাহাস হয়। যারা শ্রোতা-দর্শক তারাও কখনো একে ধর্ম অবমাননা হিসেবে গণ্য করেনি। রীতা দেওয়ানের মতাদর্শ, মতবাদ বা দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমি বা আপনি দ্বিমত করতেই পারি। কিন্তু যে কারণে তাকে দোষী বলা হচ্ছে সেই অপরাধে সে অপরাধী নয়। ফেসবুক থেকে