আনিস আলমগীর : ছেলেটি পড়ে সাংবাদিকতায়। তার বন্ধু পড়ে বাংলাসাহিত্যে। বন্ধুর বাংলা ক্লাসে সব সুন্দরীর সমাবেশ দেখে চুরি করে একদিন বসে যায় সে ক্লাসে। লেকচার কীসে ছিলো কানে ঢুকেনি, তাকিয়ে ছিলো একজনার পানে। তিনিও সাড়া দিয়েছেন। ছেলেটি তাৎক্ষণিক লিখে ফেলে চিরকুট যদি আপনার মনে মাধুরী মিশায়ে এঁকে থাকো কারও ছবি। সে কথা বলিয়া যেও, ভুলিয়া যাবে যে সবই। ক্লাসের মধ্যে হস্তান্তর হলে জবাব আসে গুরুচÐালী। বিদ্রæপের হাসি, ভবিষ্যৎ কবির, একজন ভবিষ্যৎ সাংবাদিকের প্রতি। একটি সম্ভাবনাময় প্রেমের মৃত্যু সেখানেই। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণজনিত দোষে ভাষাকে দুষ্ট করার এই যে দোষটি ছেলেটিকে দেওয়া হলো, ছেলেটির তাতে দোষ কী ছিলো। কোটেশনটি তো ছিলো জাতীয় কবি কাজী নজরুলের গানের লাইন। গেয়েছেন কাননদেবী। সাধুকে আনুষ্ঠানিক বিদায় তো বহু যুগ আগেই দেওয়া হয়েছে। তাহলে ভাষা দূষণের অপরাধ আসবে কেন।
ভাষায় সাধু ও চলিতের মিশ্রণের অভিযোগ আর কতো চলবে। কতো প্রেম গুরুচÐালী দোষে মরে যাবে। যেসব ভাষা পÐিত গুরুচÐালী দোষ ধরেন তারা কি জানেন কবিতা এবং গানে হামেশাই সুর ও ছন্দের স্বার্থে গুরুচÐালী চলে আসছে? তাহলে অন্যখানে দোষ হবে কেন। শব্দের সাধুরূপ ও চলিতরূপের পার্থক্য কজন ধরতে পারেন? জুতা না জুতো, পূজা না পুজো, তুলা না তুলো লেখার সময় আপনি কী খেয়াল করেন এর প্রথমটা সাধুরূপ, দ্বিতীয়টা চলিত রূপ? হে পÐিতগণ, ইত্তেফাক, আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় আর আমার বড় ভাই সলিমুল্লাহ খানের কলাম পড়ার জন্য আমাদের সাধুর যন্ত্রণা আর কতো সহ্য করতে হবে? জগতে আর কেউ তো সাধু ব্যবহার করে না। সাধুতে লেখা পুরনো সাহিত্য কী করবেন। রেখে দেন যারা সাহিত্যে বিশারদ হবে সেই বাংলা সুন্দরীর মতো। আর ক্লাসিকগুলো সংক্ষিপ্ত এবং চলিত ভাষায় ছড়িয়ে দিন নতুন প্রজন্মকে। ভাষা তার গতিতে চলুক না। সাধু শব্দের দরকার হলে চলিত ভাষায় যাবে, চলিতের দরকার হলে সাধুতে আসবে। সবচেয়ে বড় কথা সাধু ভাষা, চলিত ভাষা চিহ্নিত করতে যাবো কোন কারণে। ভাষা হোক একটাই বাংলা ভাষা। আ মরি বাংলা ভাষা। ফেসবুক থেকে