প্রকাশিত: Sat, Feb 10, 2024 1:24 AM আপডেট: Tue, Sep 17, 2024 9:15 PM
[১]ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠ, কোয়ালিশন সরকার গঠনের জন্য মিত্র খুঁজছেন নওয়াজ শরীফ
ইকবাল খান: [২] ঘোষিত সরকারি ফলাফলে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শুক্রবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয় দাবি করে বলেছেন, তার মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নির্বাচনী ফলাফলে সবচেয়ে বড় দল হিসাবে আবির্ভূত হযেছে।
[৩] আলজাজিরা জানায়, তিনি বলেছেন, আমরা দেশকে কঠিন সময় থেকে বের করে এনেছিলাম এবং আমরা আবারও তা করবো।
[৪] নওয়াজ শরিফ আরও বলেন, পাকিস্তানকে সংকট থেকে উদ্ধারে আমরা সব দলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের সঙ্গে বসতে এবং একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনে ঐক্যবদ্ধ হতে।
[৫] পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত মোট ২১৭টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে।
[৬] আলজাজিরা জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত মিনিট পর্যন্ত আসনভিত্তিক প্রাপ্ত ফলাফলে জেতার দিক থেকে এগিয়ে আছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা এখন পর্যন্ত ৮৮টি আসনে জয়লাভ করেছেন।
[৭] বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা পেয়েছেন ৫০টি আসন।
[৮] সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় থাকা নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) এখন পর্যন্ত ৬১টি আসন পেয়েছে।
[৯] অন্য ১৮টি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য প্রার্থীরা।
[১০] ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার ভোট গণনায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যোগাযোগে গোলযোগের কারণে ভোট গণনায় দেরি হচ্ছে।
[১১] ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ১০ মিনিট আগে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। কল ও ডেটা সেবা, কোনটিই সচল ছিল না।
[১২] কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় এখন নির্বাচনি ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়াটি ত্বরাণ্বিত করতে বলেছে।
[১৩] এদিকে, ইমরান খানের দল অভিযোগ করছে, ফলাফল ঘোষণায় এমন বিলম্ব ভোট কারচুপির লক্ষণ।
[১৪] কে হবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী?: এখন পর্যন্ত যেসব আসনের ফলাফল দিয়েছে, তাতে টানটান উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।
কারণ আসন সংখ্যার দিক থেকে দলগুলো প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।
[১৫] এই পরিস্থিতিতে ভোটের ফলাফল দিতে দেরি হলেও দেশটির প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন যে কে হতে যাচ্ছেন তাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
[১৬] তবে এবারের নির্বাচনে ভোট কারচুপি হোক বা না হোক, সেনাবাহিনীর সুনজরে থাকার কারণে চতুর্থবারের মতো ফের নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক।
[১৭] রাষ্ট্রীয় গোপন নথি পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এখন জেলবন্দী থাকলেও ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তার দল সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভালো করছে।
[১৮] নির্বাচনের পরদিন পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পাওয়াটা অস্বাভাবিক না হলেও পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার মাত্রা নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকরা।
[১৯] ইউএস ইন্সটিটিউট অব পিসের তামান্না সালিকুদ্দিন বিবিসি নিউজডে’কে বলেন যে এই নির্বাচনের ফলাফল একপ্রকার ‘হয়ে যাওয়া যুক্তি’। তার মতে, এই চুক্তি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার দল পিএমএল-এর বিজয়ের পথ অনেকটা পরিষ্কার করেছে। “খুব কম অফিশিয়াল ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে এবং ইসিপি তথ্য প্রকাশ করছে না। আমার মনে হয়, এটা অস্বাভাবিক। যারা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় বিস্ময়।”
[২০] তিনি আরও বলেন যে নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে ফলাফল আসছে, তাতে কোনও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।
[২১] নির্বাচনের প্রধান তিন প্রার্থী: সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে করা হচ্ছিল। যদিও তার এমন উন্নতি কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
[২২] কারণ মাত্র ছয় বছর আগে, অর্থাৎ গত নির্বাচনের সময় দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল তাকে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে তার তৃতীয় মেয়াদের সময় সীমা কমিয়ে আনা হয়েছিল।
[২৩] কিন্তু সম্প্রতি তিনি নির্বাসন থেকে ফিরেছেন। গত বছর তার বিরুদ্ধে দেয়া ক্ষমতায় আসতে আজীবন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়েছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে তার সব অপরাধের রেকর্ডও। সবমিলিয়ে সেনাবাহিনীর সমর্থনে তিনি আবারও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন।
[২৪] বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি)। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা ৩৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক মূলত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে।
[২৫] যে রাজনীতিবিদ এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, তিনি এমন একজন প্রার্থী যিনি আসলে ব্যালটেই নেই। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর থেকে কারাগারে থাকলেও ভোটের মাঠে এখনও তার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
[২৬] গত সপ্তাহে তাকে আবার কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
[২৭] ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নতুন চেয়ারম্যান গহর আলী খান পরের অবস্থানে থাকা প্রতিযোগীর তিনগুণ বেশি ভোট পেয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বুনার আসন থেকে জয় লাভ করেছেন।
[২৮] দলটির আরেক জেষ্ঠ্য নেতা আসাদ কায়সার, যিনি সংসদের সাবেক স্পিকার ছিলেন তিনিও খাইবার পাখতুনখোয়া’র সোয়াবি আসন থেকে জয়যুক্ত হয়েছেন।
[২৯] বিবিসি উর্দু থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পিটিআই প্রার্থীরা ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করতে পারবে না, নির্বাচন কমিশন এরকম একটা আইন জারি করায় এই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হয়েছিলো।
[৩০] বিশ্লেষকদের ধারণা, নির্বাচন যেমনই হোক, সেনাবাহিনীর সুনজর থাকায় শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করবে নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল। যদিও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল ভিন্ন কথা বলছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইমরানের খানের দল এখনও পিএমএল থেকে এগিয়ে।
[৩১] পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে রয়েছে ৩৩৬টি আসন। এর মধ্যে ২৬৬টি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হচ্ছে। ৭০টি আসন রিসার্ভ এবং এর মধ্যে ৬০টি হলো নারী আসন ও ১০টি অমুসলিমদের।
[১] জনগণ তাদের রায় দিয়েছে: ইমরান খান
ইমরুল শাহেদ: [২] পাকিস্তান নির্বাচনে ইমরান খানের অবস্থান নিয়ে টাইম ম্যাগাজিন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাকে গুলি করা হয়েছে, কারাবন্দি করা হয়েছে, তার দলটিকে কার্যত নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে, প্রচার মাধ্যমেও তাকে অবাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছে। কিছুই তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সংশ্লিষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে এগিয়ে আছে।
[৩] এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিটিআই দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া পোস্টে নির্বাচনে বিজয় দাবি করেছেন। তার দল প্রধান ইতোমধ্যে এককভাবে সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলছেন। ইমরান খান বলেছেন, নির্বাচনে ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণ তার দলকে জেতানোর পক্ষে নিজেদের রায় দিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, ভোট গণনার প্রক্রিয়া যেন সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করাটা এখন জরুরি।
[৪] এক্স পোস্টে ইমরান খান বলেন, ‘জনগণের চাওয়াকে দমিয়ে রাখতে সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও আজ(বৃহস্পতিবার) নির্বাচনে বিপুল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা বারবারই বলেছি, যেটা সময়ের দাবি, তাকে কোনো শক্তি দিয়েই ঠেকানো যায় না।’ সম্পাদনা: ইকবাল খান
[১] পাকিস্তানে সরকার গঠনের তোড়জোড়
ইমরুল শাহেদ: [২] নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা চলছে ধীর গতিতে। তিন দল - পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)’র মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। কখনো নওয়াজের দল এগোচ্ছে, কখনো পিপিপি, কখনো পিটিআই সমর্থিত নির্দলরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
[৩] ভোটের ফল প্রকাশ হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। সে জন্যই ভোট শেষ হওয়ার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও খুব বেশি আসনের ফলাফল জানা যায়নি। এর মধ্যেই পিএমএল-এন এবং পিটিআই দল সরকার গঠন নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক প্রার্থী নিহত হওয়ায় একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল আগেই। তাই বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে ২৬৫ আসনে। কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে চাইলে ১৩৪টি আসনে জিততে হবে।
[৪] জিওটিভি জানিয়েছে, পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ব্যারিস্টার গওহর আলী খান পিপিপি বা পিএমএল-এন’র সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ফলাফলে এগিয়ে থাকার কারণে এ প্রশ্নটি সামনে এসেছে। কারণ পিটিআই দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী সংখ্যা বেশি।
[৫] ব্যারিস্টার গওহর জিওটিভিকে বলেন, ‘এই দুই দলের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’ তিনি দাবি করেন, পিটিআই জাতীয় পরিষদে(ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ১৫০টির বেশি আসন পাবে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এই আসনই যথেষ্ট।
[৬] নওয়াজ শরিফের দলের নেতা ইসহাক ধর বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা নির্বাচনে জয়ী হচ্ছেন, তাদের সঙ্গে তার দলের যোগাযোগ আছে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের চলমান থাকার মধ্যে শুক্রবার তিনি জিওটিভিকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে যে কোনো দলের সঙ্গে বিজয়ী স্বতন্ত্রদের যুক্ত হতে হবে।’
[৭] ইমরান খান এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। পাকিস্তানে জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের নেতা ইমরান খান। একাধিক মামলায় সাজা পেয়ে তিনি এখন কারাগারে। তার দলের নেতা-কর্মীরাও দমন-পীড়ন ও মামলায়-হামলায় বিপর্যস্ত। নিজেদের দলীয় প্রতীক না পেয়ে তারা নানা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নামেন।