ফরহাদ আমিন: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে বুধবার রাতে আবারো গোলাগুলি হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের পর নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে সেখানকার রোহিঙ্গারা। শূন্যরেখার পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের বাসিন্দারাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। 

বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত এই থেমে থেমে গোলাগুলির পর রোহিঙ্গা বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখার আশ্রয় ক্যাম্প রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ ও ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ।

দিল মোহাম্মদ বলেন,গোলাগুলি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের পর তীব্র শীতের রাতে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষেরা দিগবিদিক ছুটে গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের ভেতর পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রাতভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে।

ওই ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গোলাগুলিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনার পর আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর মধ্যে অনেকের বসতঘর পুড়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই এদিক-সেদিক ছুটছে।

ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগায় নারী, শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের সেখান থেকে তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। আবার অনেকে আশপাশের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে কোনো মানুষকে রাস্তাঘাটে বের হতে দিচ্ছে না প্রশাসন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, কোনারপাড়া আশ্রয়ক্যাম্প ছেড়ে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে আশ্রয় নিয়েছে। আর কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ভেতর চলে গেছে। যারা বাংলাদেশের দিকে এসেছে, তাদের অধিকাংশ নারী, বৃদ্ধা ও শিশু। তাদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

উপজেলার ঘুমধুমের তুম্ব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বুধবারের গোলাগুলি ঘটনায় এলাকাবাসিকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।বুধবার সীমান্তে আরসা ও আর এসও’র মধ্যে হঠাৎ গোলাগুলিতে একজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধ হয়। 

বৃহস্পতিবার নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি  ব্যাটালিয়নের জোন কমান্ডার  লে. কর্নেল রেজাউল করিম রেজা প্রেস ব্রিফিং করেন। এসময়  তিনি এ এলাকাবাসিকে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন।  পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের এ সচেতন থাকতে বলেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমেন শর্মা বলেন, ঘটনাটি যেহেতু শূন্যরেখায় সেখানে আন্তর্জাতিক রীতি মতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে  বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব