প্রকাশিত: Tue, Jan 24, 2023 3:51 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 7:27 PM

শিক্ষাক্ষেত্রে ফরমে শুধু বাবা নয়, লেখা যাবে মা কিংবা আইনগত অভিভাবকের নাম: হাইকোর্ট

খালিদ আহমেদ, জেরিন আহমেদ: শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোনো ফরম পূরণের অভিভাবক কলামে বাবা,  মা কিংবা আইনগত অভিভাবকের নাম বসানোর সুযোগ রাখার নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ২০০৯ সালে করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে এ রায় এলো। 

রিটপক্ষের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা একটি অনলাইন পোর্টালকে বলেন, হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান যাদের বাবার পরিচয় নেই তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন। হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে, শুধু বাবার নাম না থাকলে একজন শিশু ফরম ফিলাপ করতে পারবে না, পাসপোর্ট পাবে না এটা ঠিক না। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে সমতার কারণে বাবা অথবা মায়ের পরিচয় থাকলেই যেকোনো ফরম পূরণ বা রেজিস্ট্রেশন পূরণ করার অধিকার পাবে।

রিটসূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পূর্বে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারায় ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। মা ও সন্তানকে কোনোরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবার চলে যাওয়ার পর ওই তরুণী তার মায়ের কাছে বড় হয়েছিলেন।

পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট তৎকালীন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থি ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থি এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেন।

একই সঙ্গে বর্তমানে কোনো কোনো শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হয় তার একটি তালিকা এবং যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ, তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর ২০২১ সালের ৬ জুন ব্লাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আদালতে দাখিল করে। পরে সেই রুলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেন, যখন রিটটি করা হয়, তখন শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। ফরমে অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম উল্লেখ করা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরমে পূরণে বাবা অথবা অভিভাবকের নাম উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে। এদিকে সিনিয়র সাংবাদিক জ ই মামুন ফেসবুকে জানান, রায়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) অমিত দাশগুপ্তের সঙ্গে। ডিএজি তাকে বলেছেন, একক মায়েদের সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে এই রায় কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না। সেক্ষেত্রে আগের মতোই পিতার অবর্তমানে মাকে সন্তানের অভিভাবকত্ব পেতে হলে, দাদা চাচাসহ আইনগত অন্য অভিভাবকদের অনাপত্তি সাপেক্ষে আদালতের অনুমোদেন নিতে হবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব