তরিকুল ইসলাম: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অত্যাধুনিক ৮তলা ভবনটির নিরাপত্তায় প্রবেশদ্বারেই বসানো হয়েছেন ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতা। প্রতি তলায় রয়েছে একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের বিশেষ ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন। 

ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতার ফলে বেশ বিপাকেই পড়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা সরকারের অন্যান্য অংশীজন। তাদেরকে ভেতরে প্রবেশে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা তার তরফে কোন প্রতিনিধি সহযোগিতা করে থাকেন। তবুও এ প্রক্রিয়ার জন্য অংশীজনদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খবরা-খবর নিয়মিত সংগ্রহ করে থাকেন এমন সাংবাদিকেরা এ নিয়ে বেশ বিপাকে। প্রতিদিন মন্ত্রণালয় ভবনের প্রবেশদ্বারে অপেক্ষা এবং প্রতি তালায় ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতায় বেশ ব্রিবত তারা।

সর্বশেষ ২০ জানুয়ারী একটি চিঠি ফাঁসের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলামকে অস্ট্রিয়াতে নিয়োগের এগ্রিমো পাঠানো এবং দেশটি রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণে না করার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ওই চিঠি ফাঁস এবং চিঠির ছবিসহ একটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এ নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরেও চিঠির কপি কিভাবে সাংবাদিকের কাছে পৌঁছল সে নিয়েও প্রশ্ন উঠে। কোথা থেকে কিভাবে ফাঁস হলো তা জানতে সক্রিয় হয় মন্ত্রণালয়। সোর্সের পরিচয় পেতে ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককেও চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং প্রতিবেদক তার অপারগতা তুলে ধরেন।

তবে অতি গোপনীয় রাষ্ট্রীয় চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বড় ধরনের চাপে পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় চিঠি ফাঁসের ঘটনাটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এরফলে আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক বিনষ্ট হতে পারে। কীভাবে রাষ্ট্রীয় চিঠি গণমাধ্যমে ফাঁস হলো এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নজরদারিতে রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

মন্ত্রণালয়ের লোকজনের এমন কর্মকাণ্ডকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কে কাকে নিচে নামাবে সব সময়েই এই চেষ্টা থাকে। আমরা খালি মানুষকে নিচে নামানোর জন্য উঠেপড়ে লাগি। আর মিডিয়াও ওই লাইনেই আছে। ওপরে ওঠানোর চেষ্টা করে না, খালি নামানোর চেষ্টা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক ডিপ্লোম্যাট আছে, তাদের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম ভালো এবং সফল বলেই শুরু থেকে তাকে নিচে নামাতে একদল তার পিছু নিয়েছে। তা না হলে পত্রিকায় এগুলো গেল কীভাবে সে প্রশ্নও রাখেন ড. মোমেন। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব