তরিকুল ইসলাম: আফগানিস্তানে চলমান পরিস্থিতির কারণে এরই মধ্যে সদস্যদেশগুলো বাংলাদেশ থেকে মহাসচিব চূড়ান্ত করার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে প্রায় ৯ বছর ধরে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে না। সার্কের সনদ অনুযায়ী, সদস্যদেশগুলোর সবাই একমত না হলে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। মূলত ভারত ও পাকিস্তানের ঐকমত্য না হওয়ায় ঝুলে আছে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। শ্রীলঙ্কার ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে সম্প্রতি যোগ দিয়েছিলেন নেপালের সদ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা বিমলা রায় পাওডেল। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও সংস্থাটির কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন বিমলা রায় পাওডেল। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আপনারা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। দেখেন ভারত-পাকিস্তানকে রাজি করাতে পারেন কিনা।

তিনি বলেন, আমরা চাই রিজিওনাল কিছু অর্গানাইজেশন গড়ে তুলতে। যাতে আমাদের সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করে ফেলতে পারি। তাহলে নতুন কোনো জোট হচ্ছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোট-ফোট কিছুনা। আমরা মেন্টালি রেডি। আমরা জোট করেছিলাম সার্ক। তখন এ নিয়ে পশ্চিমারা বলেছে পুওরমেন্স ক্লাব। এখন আবার পুওরমেন্স ক্লাবে নজরও দিচ্ছে। আমরা  মাল্টি লেটারিজমও চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাল্টি লেটারিজম দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, এটা আমরা চাই না।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সার্কের বর্তমান মহাসচিব এসালা রোয়ান উইরাকুনের দায়িত্ব শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর আফগানিস্তান থেকে মহাসচিব নিয়োগের কথা থাকলেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ থেকে মহাসচিব নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে সাধারণত একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অথবা সাবেক কূটনীতিককে মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সার্ক সচিবালয়কে অবহিত করা হবে। এখানে অন্যান্য দেশগুলোর মতামত নেওয়া বা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশি মহাসচিবের মেয়াদ যখন শেষ হবে তখন যদি আফগানিস্তান পরিস্থতি স্বাভাবিক তখন দেশটি পরবর্তী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

সার্ক সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর সার্ক প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত দুই দফায় সংস্থাটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছে বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠার পর সংস্থাটির প্রথম মহাসচিব হিসেবে ১৯৮৫ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্কের শেষ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এরপর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। সে বছর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ওই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উরিতে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে ভারত সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের পর পাকিস্তান নয়া উদ্যমে সম্মেলন করতে উৎসাহী হয়ে উঠে। পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ভারতের ‘একগুঁয়েমি মনোভাবকে’ দায়ী করেছিলেন এবং সার্ককে ‘অকার্যকর’ করে তোলার দায়ও পুরোপুরি ভারতের ওপর চাপিয়েছিলেন। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব