ইমরুল শাহেদ: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় সর্বশেষ শনিবার সকালে তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এ গুদামটির অবস্থান ছোট কুমিরা এলাকার একটি ডিপোতে। এর আগে গত ৪ মার্চ ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের’ প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তাতে সাতজন নিহত ও শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড উপজেলায় শিপইয়ার্ড, কন্টেইনার ডিপো, অক্সিজেন প্ল্যান্ট, স্টিল রি-রোলিং মিল, তেল ডিপো, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, পুরনো জাহাজের তেল, টায়ার এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মজুদ ও কাটার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৭৯টি শিপইয়ার্ডসহ চার শতাধিক ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এই উপজেলায় বাস করেন শতসহস্র শ্রমিক। সময় টিভি

এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শুধু ২০২২ সালেই মারা গেছেন ২৩৮ জন শ্রমিক। যার মধ্যে বিএম কনটেইনার ডিপোর দুর্ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।

এসব দুর্ঘটনার কারণ বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও তদারকিতে গাফিলতির কথা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) প্রোগ্রাম অফিসার ফজলুল কবির মিন্টু জানান, ‘লোকালয়ে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি না থাকা ও মালিকপক্ষের চরম উদাসীনতার কারণে শ্রমিকদের প্রাণহানি ঘটছে। বড় বড় কারখানা করতে পারে, কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সবার মধ্যে যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। সময় টিভি

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী শাহীন গণমাধ্যমকে জানান, গত দশ বছরে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রাণহানির সংখ্যা পাঁচশ’র বেশি হতে পারে। কারণ অনেক মৃত্যুর খবরই প্রকাশ্যে আসে না। একুশে পত্রিকা

গত সোমবার ‘চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্প প্রবণ এলাকার দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে’র জন্য আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব দুর্ঘটনার এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠে। সভায় সীতাকুণ্ড এলাকায় ভারী ও মাঝারি শিল্প-কারখানার সংখ্যা কত তা জানতে চান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বিডিনিউজ

কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত তখন জানান, সীতাকুণ্ডে ৫৭৫টি কারখানার নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান চালু হয়নি। নিবন্ধনের বাইরে কতগুলো আছে, তা তার জানা নেই। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরো চট্টগ্রাম জেলায় নিবন্ধন নিয়েছে ৪৯৪৮টি কল-কারখানা। চালু আছে ২০৩২টি। দেশের জাহাজ ভাঙার কারখানাগুলো সীতাকুণ্ডেই এবং যে কোনো কারখানা স্থাপনে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর ছাড়পত্র নিতে হয়।

একই বিষয়ে সীতাকুণ্ডের ইউএনও শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তহশিলদারদের মাধ্যমে আমরা একটা জরিপ করেছিলাম। ৪৮০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টিতে গত বছর আমরা পরিদর্শন করেছি। কিছু নির্দেশনাও দিয়ে আসি।’

সীমা অক্সিজেন বা বিএম ডিপো নয়, চট্টগ্রাম বন্দরে এর আগেও বহু রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে মিথানলভর্তি ড্রামে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চারজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন এবং দগ্ধ হন অনেকেই। একই বছর নাইট্রিক অ্যাসিডভর্তি চারটি কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হলে বন্দরে আতঙ্ক ছড়ায়। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই বিকেলে ৩ নম্বর শেডে আগুন লেগেছিল। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব