
প্রকাশিত: Wed, Apr 12, 2023 4:23 PM আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:44 PM
আপনি আমাদের ‘অষ্টম বীরশ্রেষ্ঠ’
রুমি আহমেদ: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শারীরিকভাবে খুব একটা ভালো ছিলেন না। সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিসের উপর নির্ভর করে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু ডায়ালাইসিস ওনাকে থামাতে পারেনি, এর মধ্যেই ছুটে চলেন শহর থেকে শহরে, দেশ থেকে দেশে। এই তো সেদিন অল্প কয়দিনের জন্য ঘুরে এলেন আমেরিকা। ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর অফুরন্ত শক্তি, উৎসাহ, প্যাশন কাজ করে এই ছুটে চলার পেছনে। সাপ্তাহিক বিচিত্রা ছিল দেশের মধ্যবিত্তের আল্টিমেট প্রকাশনা, বিচিত্রার এনডোর্সমেন্ট ছিলো সর্বোচ্চ প্রচারণা।
সত্তর দশকের বিচিত্রায় বঙ্গন্ধু, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী প্রমুখ ছাড়া হাতেগোনা আর যে কজন বিচিত্রার প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁদের একজন। বিচিত্রা এক প্রচ্ছদ করে সোনালী ধানক্ষেতের ব্যাকগ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আছেন ঝাঁকড়া চুলের তরুণ ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পান আজ থেকে ৪১ বছর আগে, ১৯৭৭ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের লক্ষে প্রথম যে বৈঠক হয় তা অনুষ্ঠিত হয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে। পরে অনেক বছর উনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান ছিলেন ।
চট্টগ্রামে জন্ম হলেও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বড় হয়েছেন, পড়াশোনা করেছেন ঢাকায়। বকশীবাজার স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ১৯৬৪ সালে তিনি বিলে চলে যান উচ্চশিক্ষার জন্য এবং জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস নেন। এর মধ্যে চলে আসে ১৯৭১। ফিরে আসেন দেশে। সাধারণ সৈনিক হিসেবে অস্ত্র হাতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে যোগ দেন। পরে একটা ফিল্ড হাসপাতালের প্রয়োজন দেখা দিলে গড়ে তোলেন প্রথম ফিল্ড হাসপাতালÑ ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং আরও একজন বিলেত ফেরত একসিডেন্ট ইনারজেন্সি চিকিৎসক ডা. মবিন মিলে।
একাত্তরের পর দেশে ফিরে উনি ইচ্ছে করলে ঢাকার প্রধানতম সার্জারি প্র্যাক্টিশনার হয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তা না করে তিনি ফিরে যান গ্রামে, আরেক যুদ্ধ ক্ষেত্রে। গড়ে তোলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ওনার পাইলট প্রজেক্ট গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রাইমারি কেয়ার কনসেপ্ট মাঠে প্রমাণ করে এবং এর ভিত্তিতে ডঐঙ আর টঘঙ আলমা আটা কনফারেন্সের মাধ্যমে গ্লোবাল ইউনিভার্সাল প্রাইমারি কেয়ার প্রকল্পের ঘোষণা দেয় ।
গ্লোবাল প্যারামেডিক যে কনসেপ্টÑ তার প্রথম উদ্ভাবক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ট্রেইন্ড প্যারামেডিক দিয়ে মিনি ল্যাপারোটমির মাধ্যমে লাইগেশন সার্জারির উদ্ভাবক ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। এ সংক্রান্ত তাঁর পেপারটা বিশ্ব বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট মূল আর্টিকেল হিসেবে ছাপা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মূল পেডিয়াটিক্স টেক্সট বইয়ের একটা চ্যাপ্টার ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী লিখতেন অনেক বছর ধরে। দেশে-বিদেশে ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর লেখা বই আর পেপার প্রচুর। প্রাইমারি কেয়ার নিয়ে লিখা উনার প্রকাশিত একটি বই ‘যেখানে ডাক্তার নেই’ একসময় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পাওয়া যেতো ।
১৯৭৯ সাল থেকেই তিনি জাতীয় শিক্ষা কমিটির ও নারী কমিটির মেন্বার হিসেবে আমাদের শিক্ষা নীতি আর নারীনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তবে গণস্বাস্থের পর তার ম্যাগনাম ওপাস হচ্ছে ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি। সমগ্র বিশ্ব আজ অবাক হয়ে গবেষণা করে বাংলাদেশের মতো দেশ এ ধরনের একটা রেডিকেল নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করলো। স্বাধীনতার পর এই ওষুধ নীতি স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ।
এই সময়ের বাংলাদেশ উনাকে জেল-জরিমানা দিয়ে সম্মান করলেও দেশের বাইরে বিশ্ব মানচিত্রে ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ব্যাপকভাবে সমাদৃত। নোবেলের পর যে সর্বোচ্চ যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ‘রেমন-ম্যাগস্যাসই এওয়ার্ড’ ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী তা বিজয়ী। এই তো সেদিনও উনাকে দেখলাম মিছিলের সামনে। দুসপ্তাহ আগে নাগরিক সভায় বক্তা হিসেবে। উনার শরীর ভালো না অনেকদিন ধরে। আমাদের দেশের ভিআইপিরা চেকআপের জন্য জার্মান, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি সফরে যান ৪০-৫০ জন সফর সঙ্গী নিয়ে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও জীবনের শেষ মাসগুলো সিঙ্গাপুরের আইসিইউতে কাটাবেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী মাঝখানে কোভিডের সময় বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিদেশে যাবার কথা হচ্ছিলো অথবা সিএমএইচ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ বা আমলাদের যা নেই, স্পাইন এবং সেলফ রেস্পেক্ট তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আছে। ‘কোভিডের সব পেশেন্ট আমার হাসপাতালে আসছে আর এখানে মারা যাচ্ছে, কোন বিবেচনায় আমি নিজে অন্য হাসপাতালে যাবো’? এই বিবেচনা বোধটা সেই সময় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের হর্তাকর্তা কারোই ছিল না, সবাই সিএমএইচে গিয়ে সকাল-বিকেল আইভারমেকটিন খাচ্ছিলেন আর সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য এয়ার এম্বুলেন্সের কোম্পানিতে ধর্ণা দিচ্ছিলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেছেন। নিজের হাসপাতালেই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে না। আপনাকে রাষ্ট্র কীভাবে মূল্যায়ন করবে আমি জানি না। আমার চোখে একজন সত্যিকারে দেশপ্রেমিক বীর। আপনি আমাদের অষ্টম বীরশ্রেঠ! ঈষৎ সম্পাদিত লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আরও সংবাদ
[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত
[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত
[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র
[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
[১]রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসসহ নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান: ইকবাল সোবহান চৌধুরী

[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত

[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত

[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র

[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
