প্রকাশিত: Wed, May 24, 2023 4:40 PM
আপডেট: Sun, Jun 4, 2023 4:47 PM

দেশের সবচেয়ে বড় সিটির ভোট ইসির এসিড টেস্ট

এম এম লিংকন ও হাসিব খান : জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটির এই নির্বাচনকে অনেকে ইসি’র জন্য এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন। সিটির ভোট সুষ্ঠু করে কমিশনও পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত বলছেন কমিশন। সুষ্ঠু ভোট করতে আইনশৃঙ্গলা বাহিনী পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। যদিও গাজীপুরসহ অন্য সিটির ভোটে বিএনপি ও সমমনা দল অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে ভোটের মাঠে বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে না। তারপরেও সম্প্রতি আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লার মুখোমুখী হয়েছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় ভোটার ও নির্বাচন বিশেজ্ঞরা।  

এ নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজ নগরজুড়েই। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন । তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নৌকা প্রতিকের আজমত উল্লা এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এর মা স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতিকের জায়েদা খাতুন। এছাড়াও আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাতি মার্কায়  বিএনপি ঘরনার রনি সরকার, লাঙ্গল মার্কায় নিয়ে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজউদ্দিন, হাত পাখা মার্কায় ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান গোলাপ ফুল মার্কায় রাজু আহমেদ, ঘোড়া প্রতীক হারুন অর রশিদ এবং মাছ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আতিকুল ইসলাম।

৫৭ টি ওয়ার্ডে  কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১৯ টি পদে লড়ছেন ৭৭ জন।

নির্বাচন বিশেজ্ঞদের মতে দৃশ্যত বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও এ সিটির ভোট আসছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য বড় বার্তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটকে বিরোধী দলগুলোকে নতুন ইস্যু হিসেবে নিতে পারে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশের দৃষ্টি রয়েছে এ নির্বাচনে।

গাজীপুর সিটিতে এই প্রথমবারেরমত ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। ভোটাররা এই মেশিনে কোন রকমের ত্রুটি ও ভোগান্তি ছাড়া ভোট প্রদান করতে পারবে কি না এই নিয়ে বেশ কয়জন প্রার্থী শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। যদিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে কোন ধরনের অভিযোগ তুলেনি। তবে, ইভিএমে ধীরগতি দেখা দিলে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এই সিটির ভোট সম্পূর্ন গ্রহণ করা কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেজ্ঞরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর মেয়র প্রার্থী না হতে পারলেও তার মা জায়েদা খাতুন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপিরা তাকে সমর্থন দিচ্ছে। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, তাই এই নির্বাচনে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে আছে আওয়ামী লীগ। এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া নতুন এই কমিশনের ওপর জনগণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটুকু আস্থা রাখবে তা অনেকাংশে এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এবার পুরো সিটিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছে,  মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল।

 আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়েছিল সাবেক দুটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে। এর আয়তন ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। 

গত সিটি নির্বাচনের আগে এখানকার ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪, এবার তা বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। নতুন ভোটার হয়েছেন ৪১ হাজার ২৭২ জন। নির্বাচনী এলাকার ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে তিন হাজার ৪শ ৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে। সিটি করপোরেশনের ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪শ ৭৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।এদের মধ্যে পুরুষ  পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭শ ৪৭ জন, নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬শ ৯৮ এবং ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। নির্বাচনে ১০ হাজার ৯শ ৭১ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী একজন এসআই বা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, একজন অস্ত্রধারী অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন এপিসি (অস্ত্রধারী) এবং ১০ জন আনসার বা ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন। 

গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে এদের সঙ্গে আরও একজন কনস্টেবলসহ মোট ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স সিটির প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে  স্ট্রাইকিং ফোর্স একটি এবং মহানগরের ৮টি থানায় একটি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এ ছাড়া প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে টিমসহ র‌্যাবের মোট ৩০টি  টিম,  পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন হিসেবে বিজিবির ২০ প্লাটুন সদস্য এবং প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে ৫৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত ১৯ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৭৪ জন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। সম্পাদনা: শামসুল হক বসুনিয়া