বিশ্বজিৎ দত্ত: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সংসদে পেশ করবেন। বিকাল ৩ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিফকেসে বাজেট ডকুমেন্ট নিয়ে সংসদে প্রবেশ করবেন তিনি। জাতীয় সংসদে এটি ৫৩তম বাজেট, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ৫ম বাজেট উপস্থাপন। এরআগে প্রয়াত দুই অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১২ বার ও বিএনপি সরকারের এম সাইফুর রহমান সমসংখ্যক বাজেট উপস্থাপন করেছেন। 

এবারের (২০২৩-২৪) বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩হাজার ৯০০  কোটি টাকা। ঘাটতি দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হবে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো আর রাজস্ব আদায়ে অদক্ষতা দূর এই দুটি বিষয়ই হবে এবারের বাজেটের প্রধান দুটি চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন, রিজার্ভ আর ডলার সংকটের মতো বিষয়গুলোও মনে রাখতে হচ্ছে সরকারকে। তাই সামনের  নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনতুষ্টির বাজেট করা এবার খুব কঠিন।  

সাবেক এনবিআর সদস্য ও অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, গত বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ড ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে রাজস্ব আয়ে। এবারে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য সকল টিআইএনধারীর উপর ২ হাজার টাকা করারোপ করা হচ্ছে বলে শুনেছি। সরকারের ৪৪টি সেবা নিতে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এটি কর আইনের পরিপন্থি বিষয়। শুনেছি এবারের ব্যাক্তিগত আয়কর সীমা সাড়ে ৩ লাখ করা হচ্ছে। এখন একদিকে বলছেন সাড়ে তিন লাখটাকা আয়ে কর দিতে হবে না। আবার রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করছেন। টিআইএনেও ২ হাজার টাকা আরোপ করছেন। এগুলো আয়কর বৃদ্ধির কোন মাধ্যম নয়। এসব যদি করা হয় তবে এটি হবে চাঁদাবাজি। 

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ও করোনার কারনে সাধারণ মধ্যবিত্ত এমনিতেই আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে আছে। সরকারি রিপোর্টেই বলছে, তারা এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। সেই সময় তাদের উপর বাড়তি করারোপ কোন ভাল দিক নয়। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে যা শুনছি ব্যবসায়ীদেরও এই বাজেটে তেমন কোন বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শিল্প আমদানি কমেছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি কমেছে। বিনিয়োগও ঋণাত্মক। এই অবস্থায় ব্যবসায়ীদের  বাজেটের মাধ্যমে উৎসাহিত করার প্রয়োজন রয়েছে।  কিন্তু তা না করে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে বিশেষ করে আমদানি পর্যায়ে নানা ধরণের কাররোপ করা হচ্ছে। এটি আগামী অর্থনীতির জন্য ভাল ফল বয়ে আনবে না। 

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচন সামনে থাকলেও বাজেটে জনতুষ্টির তেমন সুযোগ নেই। আমাদের টাকা ছেপে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। 

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন কীভাবে হবে এটা অবশ্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই অর্থ কোথা থেকে সরকার জোগাড় করবে, এটা কি ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ঋণ নেবে, না কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে, না বৈদেশিক ঋণ নেবে সেটা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে। এর বাইরে আরো যে বড় চ্যালেঞ্জ আছে তা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকের আয় কমেছে, ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব