প্রকাশিত: Mon, Jun 12, 2023 10:57 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 4:48 AM

সিরাজুল আলম খানের নির্দেশেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা তৈরি হয়েছিলো, জানালেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

ভূঁইয়া আশিক রহমান: ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সিরাজুল আলম খানের নির্দেশেই জাতীয় পতাকা তৈরি হয়েছিলো ১৯৭০ সালের ৬ ও ৭ জুন। 

তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের ৬ জুন গভীর রাত থেকে শুরু করে ৭ জুন ভোরবেলার মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি হয়েছিলো। এতো কম সময়ে একটি দেশের পতাকা তৈরির ইতিহাস আর নেই। ৬ জুন রাত সাড়ে সাড়ে দশটার পরে তৎকালীন ইকবাল হলের ১১৬ নম্বর কক্ষ, সেই কক্ষটি ছিলো আ স ম আব্দুর রবের। আ স ম আব্দুর রব, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মার্শাল মনিÑ তাদের নির্দেশ দিলেন সিরাজুল আলম খান। তিনি বললেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরি করতে হবে। সবাই একটু আশ্চর্য হলো! ১৯৭০ সালের জুন মাস, দেশ স্বাধীন হয়নি তখনো, সংগ্রাম চলছে। কিন্তু সিরাজুল আলম খানের নির্দেশ শিরোধার্য। 

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথমত সিদ্ধান্ত হলো যে, পাকিস্তানের পতাকায় সবুজ আছে, বাংলাদেশের পতাকার জমিন হবে গাঢ় সবুজ। এ দেশের প্রকৃতি ধারণ করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হলো, পতাকার চারদিক দিয়ে একটা বর্ডার থাকবে সোনালী রঙের, সোনালী আঁশ পাটের প্রতিনিধিত্ব করবে। মাঝখানে একটি সূর্য থাকবে, লাল সূর্য। লাল সূর্যের ওপরে থাকবে বাংলাদেশের পতাকা। পতাকার মাপজোখ ঠিক করবে? তখনকার বুয়েটের মেধাবী ছাত্র হাসানুল হক ইনু সেই মাপজোখ করলেন। কামরুল ইসলাম খসরুকে দায়িত্ব দেওয়া হলো যে, পতাকার কাপড় যোগাড় করো, তখন রাত অনেক হয়ে গেছে। দোকানপাট খোলা নেই। 

তাদের সবার সঙ্গে নিউ মার্কেটের অ্যাপোলো ক্লাব স্টোরের মালিকের বজলুর রহমান লস্কর সঙ্গে পরিচয় ছিলো। মালিকের ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো। আজিমপুরে তার বাড়ি। আজিমপুর গিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হলো। উদ্দেশ্য আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি চাবি দিয়ে দিলেন, দোকানে গিয়ে গাঢ় সবুজ রঙের কাপড় পাওয়া গেলো। তখন প্রশ্ন এলো, দর্জি কোথায় পাওয়া যাবে? 

প্রথমত কামরুল ইসলাম খসরু গেলেন ঢাকার নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেটের এক দর্জির দোকানে। দর্জি জানালো, সে পতাকা তৈরি করতে পারবে না! দর্জি পরামর্শ দিলো, বলাকা বিল্ডিংয়ের তিন তলায় ছাত্রলীগের অফিসের কাছে একটা দোকান আছে, পাক ফ্যাশন টেইলার্স। তিনি দোকানেই ঘুমান। মোহাম্মদ উল্লাহ, আব্দুল খালেক মোহাম্মদি আর নাসির উল্লাহÑ তিনজনেই দোকানে ঘুমান। পতাকা তৈরি করে দিতে তারা রাজি হলো। সেজন্যই আমি বলি, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তাদেরও অবদান আছে। ভোরের মধ্যে পতাকা তৈরি হয়ে গেলো। তারপর ইকবাল হলে পতাকা নিয়ে আসা হলো।

তখন প্রশ্ন উঠলো, পতাকার ওপর মানচিত্র কে আঁকবে? ঠিকমতো হতে হবে তো। কুমিল্লার ছাত্রলীগের সভাপতি শিবনারায়ণ দাশ। তিনি ভালো আঁকিয়ে ছিলেন। তাঁকে নিয়ে আসা হলো হলো সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য। সিরাজুল আলম খান নির্দেশ দিলেন, পতাকার ওপর মানচিত্র আঁকতে হবে। রং-তুলি যোগাড় করা হলো। শিবনারায়ণ দাশ মানচিত্র তৈরি করে দিলেন । 

৭ জুন আওয়ামী লীগের একটি সভা ছিলো পল্টনে। সেই সভায় বঙ্গবন্ধুর হাতে একটি পতাকা দেওয়া হলো। তিনি কিছুই জানতেন না। পতাকা দেখে বঙ্গবন্ধু হতচকিত হলেন। পাশে দাঁড়ানো শেখ ফজলুল হক মনির হাতে পতাকাটি দিয়ে দিলেন। এই হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা । ২ মার্চ কলা ভবনের পশ্চিম দিকে গাড়িবান্দার ছাদে আ স ম আব্দুর রব যেই পতাকাটি তুলেছিলেন, সেই পতাকাটির মাঝখানে মানচিত্র ছিলো। জাতীয় পতাকা তৈরির ইতিহাসে সেই রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খানের কথা স্বীকার করতে হবে। বাঙালি ও বাংলাদেশ যতোদিন টিকে থাকবে, সিরাজুল আলম খানকে স্মরণ করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা এটাই ছিলো। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব