প্রকাশিত: Mon, Aug 14, 2023 11:05 PM
আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 11:14 AM

বঙ্গবন্ধু হত্যায় সাম্রাজ্যবাদীদের বিশেষ ভূমিকা ছিলো

অধ্যাপক যতীন সকার

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হবেÑএরকম একটা ধারণা কেউ কোনোদিন করতে পারেনি। কিন্তু বাস্তবে তেমন একটি ঘটনাই ঘটেছিলো। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে কী আছে, কে আছেÑএ সম্পর্কে নানান জনে নানান কথা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে মিশেছিলো, বঙ্গবন্ধুর একেবারে ঘনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, তলে তলে তারাই মীরজাফরের ভূমিকায় অভিনয় করছিলো। এই মীরজাফরদের মধ্যে অন্যতম হলো খন্দকার মোশতাক। সে আসলেই একজন খুনি। মোশতাক নানানভাবে বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার চেষ্টা করছিলো। বঙ্গবন্ধু যখন জীবিত ছিলেন, তখন সে এমন ভাব দেখাতোÑ যেন তার চেয়ে বড় বঙ্গবন্ধুর আর কোনো ভক্ত নেই! সেই মোশতাকই পরে যা করলো, তা আজ ইতিহাসে। একটা কথা মনে রাখা উচিত, বঙ্গবন্ধুহত্যা কেবল মোশতাকের একার ব্যাপার ছিলো না। 

বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতাই নিয়ে আসেননি, তিনি স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ, সেই মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করেছিলেন। সেই চার মূলনীতি তখন অনেকের কাছে খারাপ লেগেছিলো। অনেকেই স্বাধীনতা চেয়েছে, পাকিস্তান চলে যাবে, পাকিস্তানের মতো তারাও এখানে শোষণ-শাসন ইত্যাদি করতে পারবে। কিন্তু এ ব্যাপারটি যখন ঘটলো না, চার রাষ্ট্রীয় মূল নীতি যখন করা হলো, তখন ওরা অনেকেই ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়লো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপরই। স্বাধীনতাই ওদের কাছে পরাধীনতা বলে মনে হলো! এরা ছিলো। তলে তলে থেকে কুকাণ্ড তারা ঘটালো। 

মনে রাখতে হবে, শুধু দেশের ভেতরেই নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন আমাদের পক্ষে ছিলো তৎপকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত। আমার তো মনে হয় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এরকম অর্থে, একটা বিশ^যুদ্ধ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের সম্মিলিত শক্তির মধ্যে একটা যুদ্ধ হয়েছিলো। সেই যুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা যে জয়লাভ করেছিলাম, কিন্তু আমাদের সেই জয়লাভটাকে সাম্রাজ্যবাদীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা সাম্রাজ্যবাদীদের একটি বিশেষ ভূমিকা ছিলো। একথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। এখন এই বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকায় আমাদের সকলকেই অবতীর্ণ থাকতে হবে। 

বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, তারা চায়নি বঙ্গবন্ধু যা চেয়েছিলেন সেটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হোক। বর্তমানেও আমাদের ঘাড়ে যে পাকিস্তানি ভূত চেপে বসে আছে, সেই পাকিস্তানি ভূতকে আমরা কিছুতেই তাড়াতে পারছি না। দেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায়, তবুও দেখা যাচ্ছে এখানে রাষ্ট্রধর্ম আছে ইসলাম। আবার বলা হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতাসহ চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বজায় আছে। এটা একটা গোজামিল। এই গোজামিলের নিরসন না হলে প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তাও আমরা পাবো না। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে পাকিস্তানি ভূত এখানে চেপে বসেছে। পরিচিতি: শিক্ষক ও গবেষক