প্রভাষ আমিন: ১. নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ৬ জানুয়ারি ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। একসময় হরতাল সফল করতে আগের সন্ধ্যায় মশাল মিছিল হতো। আর এখন লাইভ মশাল জ্বলে কখনো বাসে, কখনো ট্রাকে, কখনো ট্রেনে। সবচেয়ে সহজ টার্গেট ট্রেন। একটু আগুন দিলেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, হতাহতও বেশি হয়। শুক্রবার হরতালের আগের রাতে পুরোনো কৌশলে মাঠে নামে দুর্বৃত্তরা। বেনাপোল এক্সপ্রেস দাউ দাউ করে জ্বলছে। যারা আগুন দিয়েছে, তারা নিশ্চয়ই খুব খুশি। চমৎকার ছবি। আতঙ্ক ছড়ানোর পারফেক্ট অস্ত্র।

২. সমস্যা হলো এই দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা ট্রেনে মানুষও ছিল। পুড়ে মরেছে ৪ জন। যারা আগুন দিয়েছে, তারাও নিশ্চয়ই দেখতে মানুষেরই মত। তাদের মনে কি কোনো মানবতা নেই, দয়ামায়া নেই?

৩. অধিকাংশ গণমাধ্যমে একটি ছবি ছাপা হয়েছে। একজন মানুষ ট্রেনের জানালা দিয়ে তার অর্ধেক শরীর বেরিয়ে আছে। হাত দুটি বাইরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তাকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। কিন্তু তিনি বেরুতে চাননি। তার স্ত্রী ও সন্তান আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার আর বেঁচে থেকে লাভ কি? রাজনীতির মুখে গ্লানির ছাপ দিয়ে তিনি আসলে আত্মহত্যা করেছেন।

৪. গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। এ কয়দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচটি ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া রেললাইন  কেটে ফেলার মত ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ৪ জন মারা যায়। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ট্রেনে নাশকতায় প্রাণ গেল ৯ জনের। আহারে, এরা সবাই রাজনীতির বলি।

৫. ট্রেনে আগুন বা অন্য কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটলে আমরা বলি, দুর্বৃত্তরা ঘটিয়েছে। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে দুর্বৃত্তদের চেনাও কঠিন নয়। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ মনসুর আলম জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে একটি ভার্চুয়াল মিটিং হয়। ১৭ মিনিটের এই মিটিঙে ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া, ককটেল ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টির নির্দেশনা আসে। সন্ধ্যা ৬টায় মিটিং হয়, রাত ৯টায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়া হয়। দারুণ সফল মিটিং বটে। যুবদল নেতারা ত্বরিৎকর্মা বটে।

৬. আগে যেমনটি বলছিলাম, যুবদল নেতা এনামুল হক এনামও নিশ্চয়ই দেখতে মানুষেরই মত। তারও নিশ্চয়ই স্ত্রী আছে, সন্তান আছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারতে তার কেমন লাগে? পোড়া মানুষের শরীর দেখার পর তিনি আবার খাবেন কীভাবে? সন্তানকে আদর করবেন কীভাবে?

প্রভাষ আমিন

৬ জানুয়ারি, ২০২৩