খালিদ আহমেদ: দীর্ঘ এক যুগেও ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার হয়নি। তার পরিবার এখনো অপেক্ষা করছে ন্যায়বিচারের জন্য। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী (১৪)। তার মৃতদেহ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলেছিল সাড়ে ৪ ঘণ্টা। প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল গণমাধ্যমসহ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন শুরু হলে ৩০ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে ফেলানীর মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ রামখানা কলোনীটারী গ্রামের নুর ইসলাম ও জাহানারা বেগমের বড় মেয়ে ফেলানী খাতুন। 

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, মেয়েকে গুলি করে হত্যা ও তার মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে রাখার দৃশ্য আজো আমার চোখে ভাসে। সেই নির্মম অসহনীয় দৃশ্য ভুলতে পারি না। আমার চোখের সামনেই ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি বেঁচেছিলাম কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। 

নুর ইসলাম জানান, তিনি পরিবার নিয়ে ভারতের আসামে থাকতেন। সেখানে চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি ফেলানীকে নিয়ে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছিলেন । দেশে এনে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

তিনি বলেন, ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে দালালে মাধ্যমে ফেলানীকে নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসছিলাম। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ ফেলানীকে গুলি করেন।

নুর ইসলাম জানান, ভারতের আদালতে ২ বার গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। আশা করেছিলাম, শিগগির ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার পাবো। আজো তা পাইনি।  তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার না পাই ততদিন বিচারের দাবি জানাতে থাকবো। ন্যায়বিচার পেলে ফেলানীর আত্মা শান্তি পাবে।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ফেলানীকে মারার পর থেকে এখনো রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। সবসময় মেয়ের মুখ ভেসে উঠে। মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে ১২ বছর ধরে অপেক্ষা করছি।

ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর বিএসএফ তাদের নিজস্ব আদালতে অভিযুক্ত সদস্যের বিচার করে।

 রায়ে অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে দেশেবিদেশে হইচই পড়ে গেলে আবারো বিচার বসে। সেখানেও অমিয় নির্দোষ বিবেচনায় খালাস পান। এরপর মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট করেন ফেলানীর বাবা। 

কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানী হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সেই দেশের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে। ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টে বারবার তারিখ পিছিয়ে যায়।

তিনি বলেন, বিচার প্রার্থনা করছি ব্যক্তি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। এ ঘটনায় বিচার হলে সীমান্তে নির্মমভাবে মানুষ হত্যার সাহস আর কেউ পেতো না। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব