প্রকাশিত: Thu, Jan 19, 2023 3:49 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 3:32 PM

আমাদের সরকারের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমী হয়ে গেছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ?

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন 

গ্যাসের দাম বাড়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে, বিদ্যুতের দাম বাড়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে, তেলের দাম বাড়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে। আমাদের মুদ্রানীতি কেমন হবে তাঁর প্রেসক্রিপশন দেয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অথবা আইএমএফ। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার ফান্ডিংয়ের নামে কেরানীগিরিতে চুবিয়ে রাখে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ আমাদের দেশের সরকারের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমী হয়ে গেছে? ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফ এর টাকায় বা পরামর্শে বিশ্বের কোন দেশের উন্নতি হয়েছে এইরকম উদাহরণ কি আছে? নিজের দেশের শিক্ষার মান ভালো 

করে দেশি থিঙ্কট্যাংক তৈরি করুন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তাড়নায় এখন আবার নতুন জ্বালা সৃষ্টি করেছে। অপপৎবফরঃধঃরড়হ পড়ঁহপরষ এর নামে ফান্ডিং দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কী কী কোর্স পড়ানো হবে তার নির্দেশনা দেওয়া শুরু করেছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। 

এই ফাঁকে সরকারও তাদের কিছু কিছু কোর্স আবশ্যিকভাবে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, যা ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজের কাররিকুলামেও ঢুকিয়েছে। দেশের স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাররিকুলাম যদি তৈরি হয় প্রভাবশালী দেশ ও তাদের নিয়োজিত সংস্থার প্রেসক্রিপশনে তাহলে সেই দেশের কপালে যে দুর্গতি আছে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? আর এইসব হতে পারছে। কারণ দেশে কোনো সত্যিকারের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী নেই। যারা আছে তারা সবাই বিক্রি হয়ে গেছে। সবাই ব্যস্ত আপন ধান্দায়। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বা বন্ধুরূপি কোনো রাষ্ট্র কি আমাদের সত্যিকারের মঙ্গল চাইবে? 

তারা চাইবে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন কখনো উদ্ভাবনী কাজ বা গবেষণায় বেশি নিযুক্ত না হয়। তারা চাইবে আমাদের দেশটি কেবল কামলা তৈরি করুক। যারা কেবল তাদের তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করবে এবং দেশ হবে তাদের বাজার। আমরা এইটাকে বলছি স্মার্ট হওয়া। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ। প্রভাবশালী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত রাষ্ট্র কখন একটি দেশের শিক্ষা ও গবেষণা কেমন হবে তা বাতলে দেয়? যখন তারা কোন দেশে দুর্বল সরকার দেখে। 

যখন দেখে সরকার নিজেই শিক্ষার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। যখন দেখে সরকার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের এমন বেতন দেয় যেই বেতনে ভালো মানের ও নিবেদিত প্রাণের শিক্ষক পাওয়া প্রায় অসম্ভব এবং তাই দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে অযোগ্য লোকদের ইচ্ছে করে বসায়। যারা এমন কাজ কাজ করে তাদের কীভাবে বিশ্বাস করি যে তারা দেশের মঙ্গল চায়। এর মানে সরকার নিজেও দেশের মঙ্গল চায় না আবার বিদেশিরা তো আমাদের মঙ্গল চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এইভাবে একটি দেশ কীভাবে উন্নত হবে? লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়