
প্রকাশিত: Thu, Jan 19, 2023 3:50 PM আপডেট: Sat, May 10, 2025 7:29 PM
লু সাহেবের ‘লু হাওয়া’!
সাঈদ তারেক
আমেরিকার একজন মন্ত্রী সফর করে গেছেন। তাও তিনদিন হয়ে গেলো। কিন্তু পোস্টমর্টেম বিচার বিশ্লেষণ তত্ত্ব তথ্য মত-অভিমতের স্রোত এখনও থামছে না। কী বার্তা রেখে গেলেন তিনি, কার পালে হাওয়া দিলেন কার গোয়ালে ধোঁয়া দিলেন, সরকার কি পেলো বিরোধীরা কি হাসিল করলো- যার যার এ্যাঙ্গেলে তত্ত্ব এবং তথ্য উপস্থাপনের প্রতিযোগিতা চলছে সমানে। কী একটা মহা মুসিবতের ব্যপার। হলেনই না হয় তিনি আমেরিকার মন্ত্রী, তিনি কি সরকার বা বিরোধী দলের ত্রাণকর্তা। তিনি কি বাংলাদেশের ভাগ্য বিধাতা। নাকি তার কথায় বাইডেন সাহেব উঠবোস করেন। উনি কী বললেন, উনার কোন শব্দের কোন বাক্যের কী অর্থ, উনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ উনার হাসি উনার চাহনী, কী তিনি বলেন নাই, কী তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কী তার বলা উচিত ছিল, কী তার বলা ঠিক হয়নি, কী বলবো, হ্যাংলামো না ছ্যাবলামো। মনে হয় আমাদের বিদগ্ধ সাংবাদিককূল আর বাঘা বাঘা পন্ডিত গবেষকদের খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নেই, পেয়েছেন একটা সাবজেক্ট, তিনদিন ধরে জাবরই কেটে চলেছেন। শুধু এই মন্ত্রী না, ভিনদেশি কোনো অতিথি পেলেই এ ধরনের হ্যাংলামিতে মেতে ওটা যেন আমাদের একটা খাসলতে পরিণত হয়েছে! লু সাহেবের সফর নিয়ে গত কয়েকদিন মিডিয়ায় যা চলছে তাকে আমার বেহুদা গাবগ্যাজাগেজি ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না।
ডোনাল্ড লু মার্কিন প্রেসিডেন্টের একজন অধস্তন মন্ত্রী। তবে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়াদি তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত বলে আমাদের কাছে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ। তার ব্যপারে আগ্রহটা একটু বেশি এই কারণে শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানে নিকট অতীতে সরকার পরিবর্তনে তিনি নাকি কলকাঠি নেড়েছেন। একবছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে আমেরিকার নাক গলানো বিশেষ করে র্যাবের ওপর স্যাংশনের কারণে একটা ধারণা চলমান যে, আমেরিকা এই সরকারের ওপর দারুণভাবে বিলা। ফেয়ার ইলেকশনের কথা বলে প্রকারান্তরে তারা সরকারের বিদায় দেখতে চায়। এই প্রেক্ষিতে লু সাহেবের সফর ঘোষণায় সরকার পক্ষ সতর্ক হয় বিরোধীরা হয় পুলকিত। কিন্তু আখেরে কী হলো? সব আশার গুড়ে বালি না! বিরোধীদের কারও সাথে দেখা করলেন না, বাছাইকরা কিছু লোকজন ছাড়া নাগরিক সমাজের কারও সাথে কথা বললেন না। চোখ লাল করলেন না, নিদেনপক্ষে মুখ গোমড়াটা পর্যন্ত না করে সহাস্যে মানবাধিকারের উন্নয়ন বিষয়ে সরকারকে সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন। দুই দিনের এই হাই প্রফাইল সফরে এটাই হচ্ছে একমাত্র ডেভলপমেন্ট। বাদবাকি সব গৎবাঁধা কথা, রুটিন ব্রিফিং। তবে একটা নতুন তথ্য পাওয়া গেলো, র্যাবের আরও কিছু লোকজনের ওপর স্যাংশন রেডি ছিল, তা স্থগিত বা বাতিল হয়েছে। বোঝা গেলো ওয়াশিংটনে হায়ার করা লবিস্ট ফার্মটি কাজ করেছে।
লু সাহেবের পারফরমেন্সে একটা সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে, আসলে তার মূল সফরটি কোথায় ছিলো ভারতে, না বাংলাদেশে। ঢাকা আসার আগে তিনদিন তিনি দিল্লিতে ছিলেন। এটা কি এমন যে, কাজ তার দিল্লিতে ফেরার পথে ঢাকায় নেমে একটু হাই-হ্যালো করে গেলেন। নইলে র্যাবের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে হ্যাপি শুধু এই কথাটা বলার জন্য হাঁকডাক করে ঢাকা আসা, হিসাবটা মেলে না। আর যদি বাংলাদেশেই তার মূল সফর ছিল তাহলে তার আগে তিনদিন দিল্লিতে তিনি কী করলেন। ধরে নিই উভয় দেশই সফরসূচিতে সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বাংলাদেশ এবং ভারত কেন? ভারত এবং অন্য কোনো দেশ হতে পারতো বা বাংলাদেশ এবং অন্য কোনো দেশও হতে পারতো। হিসাবের গোমড়টা এখানেই।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বা দক্ষিণ পূর্ব এশীয়ায় মাতব্বরী ধরে রাখতে বা চীন ঠেকাতে ভারতকে আমেরিকার দরকার। ভারত যতই রাশিয়া থেকে তেল কিনুক বা দহরম মহরম করুক আমেরিকা জানে ভারত হাতছাড়া হয়ে গেলে এ অঞ্চলে তার আম ছালা দুই-ই নেই। যে কারণে স্যাংশন খাওয়া রুশ জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে না পারলেও ভারতে গিয়ে মাল খালাশ করতে পারে। লু যদিও বলেছেন, ভারতকে এ ব্যপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু ওই পর্যন্তই। এর বেশি আর কিছু করতে পারবে কী? শ্রীলংকা চীনের খপ্পরে গিয়ে পড়েছে, নেপালও কব্জায়। পাকিস্তান পুরনো ইয়ার। বাংলাদেশকেও দেদারছে টাকা গেলাচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতের দ্বারস্থ হওয়া তাদের ওপর ভর করা ছাড়া আমেরিকার আর কী করার আছে? বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের কিছু কথা আছে। ভারতকে হাতে রাখতে হলে সে কথাও তো শুনতে হবে। আশা করি পাঠক, বাকিটা বুঝে নিতে অসুবিধা হবে না।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার এগুলো আমেরিকার বহুল ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র। দুনিয়ার এমন বহু দেশের সাথে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক যেখানে গণতন্ত্রের ‘গ’ নেই, মানবাধিকারের বালাই নেই। বাংলাদেশে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, গুম-খুনের চল সেই ২০০৪ থেকে। এ নিয়ে বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থাই বরাবর সোচ্চার। অথচ আমেরিকার নজরে এলো মাত্র গত বছর, যখন থেকে বাংলাদেশ চীনের টাকা নেওয়া শুরু করলো। আবার নতুন স্যাংশন ঠেকেও গেলো হিউম্যান রাইটসয়ের এক রিপোর্টে। মোদ্দা কথা যখন যেখানে প্রয়োজন এ অস্ত্র প্রয়োগ করা হয় আবার কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে উল্টো গাইতেও সময় নেয় না। হতে পারে লু সাহেব এসেছিলেন এক উদ্দেশ্য নিয়ে, ভারতে কথাবার্তা বলেই তা ফায়সালা হয়ে গেছে বা অন্য কোনদিকে মোড় নিয়েছে। ঢাকা এসে গায়ে কিছু লু হাওয়া লাগিয়ে গেলেন মাত্র। কেউ কেউ বলছেন, তার যা বলার প্রধানমন্ত্রীর এক প্রভাবশালী উপদেষ্টার সাথে দেখা করে বলে গেছেন। কী বলে গেছেন বা কার পালে লু হাওয়া লাগিয়ে গেলেন তা স্পষ্ট হতে কিছুদিন সময় নেবে। তবে একটা কথা ভুললে চলবে না, কূটনীতিতে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বলে কোনো কথা নেই। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
