প্রকাশিত: Sat, Jan 21, 2023 3:05 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 4:49 PM

ভাগ্য বলি কাকে?

মঈন চৌধুরী

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর প্রশ্ন ছিল, ভাগ্য কী? প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া একই সাথে খুব কঠিন আবার খুব সোজা। আমরা যদি প্রশ্ন করি ‘১+১=২ হয় কেন?’, তবে অনেকেই এই প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে পারবে না, যদি না তার ‘শূন্য’ আর ‘একক’ সম্পর্কে ধারণা না থাকে। ভাগ্যের ব্যাপারটাও অনেক জটিল হয়ে পড়ে, যখন আমরা বস্তু আর বস্তুগুণ নিয়ে চিন্তা করতে পারি না। বিষয়টি কিছু উদাহরণ  সহ ব্যাখ্যা  করছি।

আমাদের পৃথিবী  আর মহাজগত বিভিন্ন মৌলিক আর যৌগিক বস্তু নিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি মৌলিক আর যৌগিক বস্তুর নিজস্ব বস্তুগুণ আছে। এখন আমি যদি প্রশ্ন রাখি ‘অক্সিজেন-এর ভাগ্য কী?’, তবে আমাদের জানতে হবে মৌলিক বস্তু অক্সিজেন-এর পরিবেশ কী আছে এবং  কী অবস্থায় আছে। অক্সিজেন যদি উপযুক্ত পরিবেশে হাইড্রোজেন পায়, তবে তার ভাগ্য হবে পানি, আর যদি কার্বনের পাল্লায় পড়ে তবে ভাগ্যে লিখা আছে কার্বনডাইঅক্সাইড। আমাদের সামনে যে বস্তুসমূহ অবস্থান করছে, তা হয় মৌলিক (যেমন সোনা, রূপা, সালফার, অক্সিজেন, কার্বন ইত্যাদি) অথবা যৌগিক (যেমন চাঁদ, সূর্য, পাহাড়, গাছ, মাছ, পশু, পাখি, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদি)। মৌলিক বস্তুর ভাগ্য হল অন্য এক মৌলিকের সাথে এক হয়ে যৌগ গড়া অথবা ভেঙে শক্তিতে রূপান্তরিত  হওয়া। আর যৌগ বস্তুর ভাগ্য হল কোন শক্তির প্রয়োগে (যেমন তাপ, বিদ্যুৎ,  বৃষ্টি,  ঝড়, সাইক্লোন, সুনামি, ভুমিকম্প, রোগ ইত্যাদি) ভেঙে নতুন যৌগ বা মৌলিক বস্তু হওয়া।

আমরা যারা মানুষ, তারাও আসলে মৌলিক বস্তু দ্বারা সংঘটিত  জৈব-যৌগবস্তু এবং আমাদের সময়কেন্দ্রিক বস্তুধর্ম আছে। একজন শিশু বয়সের আমি, যৌবনের আমি আর বৃদ্ধ বয়সের আমি একই রকম বস্তুগুণ ধারণ করে না। আবার জ্ঞান কাঠামো আর পরিবেশের জন্য আমাদের বস্তুগুণ বদলায় সময়ের সাথে। আমরা তাই বলতে পারি, মানুষ হল এমন এক প্রানী, যার বস্তুগুণ জ্ঞান,পরিবেশ, সুযোগ আর সম্ভাবনাকে গ্রাহ্য করে বদলায়। আমরা যেহেতু আমাদের আগামী জানিনা, তাই আমাদের বস্তুধর্ম বদলানোকেই ভাবি ভাগ্য। মানুষের যেহেতু ইচ্ছে আছে, সুযোগ আছে, সম্ভাবনা আছে, সেহেতু সে তার কর্মে আর জ্ঞানে মানবিক জ্ঞানী মানুষ  হতে পারে, আবার মাস্তানি  করে দুর্নীতি করে রাজনীতি  করে টাকার কুমীর  হতে পারে। একজন মানুষ তার কর্ম আর বস্তুধর্ম দিয়ে অন্য একজনকে শোষণ  করে ফকির বানাতে পারে, খুন করতে পারে, গুম করতে পারে আবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মানুষকে এক নতুন অবস্থানে নিতে পারে। কিন্তু মানুষের সব কাজই যেহেতু সময়কেন্দ্রিক, আর মানুষ যেহেতু আগামী জানে না, সেহেতু মানুষের সময়কেন্দ্রিক অবস্থানকে ভাগ্য বলেই বিবেচনা করা হয়। ভাগ্য সম্পর্কে আমি যা লিখলাম তা আমার নিজস্ব মতামত, পাঠকের ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে আমি মনে করি ভাগ্য কপালে লিখা নেই, ভাগ্য মানুষের কর্মফল বা সময়কেদ্রিক সামাজিক আর জৈবিক বস্তুধর্ম। ফেসবুক থেকে