প্রকাশিত: Sat, Jan 21, 2023 3:08 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 12:26 PM

নেপালে প্লেন দুর্ঘটনা এবং দেশটির ভালো মানুষেরা

ইমতিয়াজ মাহমুদ

পোখারার নতুন এয়ারপোর্টটা চালু হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। এর আগের যে এয়ারপোর্টটা রয়েছে সেটা ছিল ছোট একটা বিমানবন্দর। সেখানে বড় প্লেন কখনো উঠতে দেখিনি। সেই এয়ারপোর্ট দিয়ে আমি বহুবার পোখারা থেকে কাঠমন্ডু ফিরেছি। ফেরার কথাটাই বলছি তার কারণ হচ্ছে পোখারা-কাঠমন্ডু যাতায়াতের জন্যে আমার প্রিয় পথ হচ্ছে সড়ক পথে যাওয়া আর প্লেনে করে ফেরা। কখনো কখনো যাওয়া আসা দুইটাই প্লেনে করেছি বটে। আমি আর জেনিফা গেলে আমরা সড়ক পথটা এড়িয়ে যেতাম, জেনিফা দীর্ঘ সড়ক পথটা পছন্দ করেন না। প্লেনে কাঠমন্ডু-পোখারা যাত্রায় সময় লাগে তেইশ চব্বিশ মিনিট। প্লেনে উঠলেন তো একটা চা বা কফি খাওয়ার সময় হয় না, তার আগেই পৌঁছে যাবেন।

প্লেনে কাঠমন্ডু ফিরতে হলে পখারা এয়ারপোর্টে আপনাকে নির্ঘাত কিছুক্ষণ সময় বাড়তি কাটাতে হবে। নেপালে কোনো অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে কোনোদিন আমি সময়মতো যেতে পেরেছি বলে মনে পড়ে না। পোখারা এয়ারপোর্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছি সেরকমও হয়েছে কখনো কখনো। বিরক্ত যে কখনো একদম লাগেনি সেকথা বলতে পারব না, কিন্তু প্লেন দেরি করলেও পখারা এয়ারপোর্টের দোতলার ছাদে অফিসের বা ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনের মতো যে ক্যাফেটা আছে সেটাতে বসে বসে পর্বত দেখতে দেখতে সময় কেটে যেতো। ছোট ছোট প্লেন, একবার তো সিতা এয়ারএর একটা প্লেনে উঠেছিলাম যেটাতে মাত্র নয়জন যাত্রী বসার জায়গা ছিল। আমার সাথে ফেসবুকে যারা দীর্ঘদিন যুক্ত আছেন, আপনারা অনেকেই পোখারা এয়ারপোর্টের ছাদে বা অন্যত্র আমার ছবি দেখেছন নিশ্চয়ই অনেকবার। 

ওদের নতুন এয়ারপোর্টটা খানিকটা বড়। ছবিতে দেখেছি সেখানে বোর্ডিং ব্রিজও আছে। এটা কিনা পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে কাজ করবে, সেজন্যে ইমিগ্রেশন ইত্যাদিও ব্যবস্থাও বেশ আধুনিক করে করা হয়েছে। পোখরালিদের প্রত্যাশা, খুব শিগগিরই অনেকগুলো আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন সরাসরি পোখারা যাতায়াত করবে। একজন বন্ধুর সাথে একবার এমনিই বলছিলাম, খারাপ হয় না, সেরকম হলে আমরাও ঢাকা থেকে সরাসরি পোখারা চলে যাব। নেপালের পর্যটন রাজধানী তো পোখারাই। সরাসরি প্লেন গেলে এমনকি উইকএন কাটানোর জন্যেও আপনি দুইদিন পোখারা ঘুরে আসতে পারেন। এখনো যাওয়া যায়, কিন্তু কাঠমন্ডু এয়ারপোর্টে ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল থেকে ডোমেস্টিক টার্মিনালে যাওয়া আর সময়মতো সংযোগ পাওয়া একটু বিরক্তিকর লাগে। 

ডিসেম্বরের শেষ দিকে একদিন ইউটিউবে দেখছিলাম পোখারার পুরাণ এয়ারপোর্ট থেকে নতুন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন-অবতরণ করেছে ইয়েতি এয়ারলাইনের একটা প্লেন। স্থানীয় সংবাদকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তির আনেকে ছিলেন সেই ফ্লাইটে যাত্রী হিসাবে। নিতান্তই পরীক্ষামূলক ফ্লাইট, দুইটা এয়ারপোর্টের মধ্যে দূরত্ব হবে তিন চার কিলোমিটারের মতো। তবুও পোখরালিদের জন্যে সেঁতা ছিল একটা নতুন অভিযাত্রা। ইয়েতি এয়ারলাইন্সও বেশ গর্ব করে বলেছিল যে না, আমরা এই নতুন এয়ারপোর্টে সর্বপ্রথম অবতরণ করেছি ইত্যাদি। এলোমেলো এইসব কথা বলছি কারণ যে দুর্ঘটনাটার কথা লিখব বলে বসেছি সেটা আলাপ করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। ইয়েতি এয়ারলাইন্সেরই একটা প্লেন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ক্রু আর যাত্রী মিলিয়ে বাহাত্তর জন মানুষ ছিল প্লেনে, টেলিভিশন আর অন্তর্জাল মিলিয়ে নানা মাধ্যমে খবর দেখলাম কেউ বেছে আছে এইরকম একটা খবর দেখব বলেÑ নেই, কেউ বেঁচে নেই।

কী বিচিত্র একটা টান যে লাগে নেপালের প্রতি। সেই বিরানব্বই সন থেকে আজ তিরিশ বছর পেরিয়ে গেছে, একদম প্রত্যেক বছর না হলেও কোভিডের আগে প্রায় প্রতিবছরই গেছি নেপালে, কোনো কোনো বছর একাধিকবারও গেছি। কী রকম একটা মায়া যেন পড়ে গেছে দেশটার প্রতি, ওদের মানুষের প্রতি (মায়া, মায়ালু এইগুলো কথা নেপালি ভাষায় ভালোবাসা বুঝায়)। আহা! নেপালের ভালো মানুষেরাÑ ভালো থেকো তোমরা। এতোগুলো মৃত্যুর শোক নিশ্চয়ই কাটিয়ে শোক খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমি ভাবছি যাবো আবার, এ বছরই যাবো, পারলে পহেলা বৈশাখের আগেই যাবো। কিন্তু মনটা বড় ভারী হয়ে আছেÑ বাহাত্তর জন মানুষের প্রাণ গেলো। লেখক ও আইনজীবী। ফেসবুক থেকে