প্রকাশিত: Tue, Jan 24, 2023 2:54 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 12:12 PM

সাম্রাজ্য-সভ্যতা-ক্ষমতার কেন অবসান হয়?

শিশির ভট্টাচার্য্য

ইওরোপে দুটি আলাদা শক্তি দেশ চালাতো : ১. রাজা এবং ২. গির্জা। এই দুইয়ের মধ্যে হাঙ্গর আর ট্যুনা মাছের মতো ক্ষমতার একটা টানাপোড়েন ছিল। মধ্যযুগে মানুষ গীর্জাকে মেনে চলতো, কিন্তু গীর্জা ও যাজকদের সমালোচনাও করতো। বছরে এমন একটি দিন ছিল যেদিন গীর্জা ও যাজকদের কার্যকলাপ নিয়ে যে কেউ তার খুশিমতো সমালোচনা-হাসাহাসি করতে পারতো। 

ভ্যালেন্টাইন ডে ছিল এমন একটি দিন, যেদিনটা পুরুষ ও নারী পছন্দের মানুষের সঙ্গে কাটাতে পারতো, যে মানুষটি নিজের স্বামী বা স্ত্রী নাও হতে পারে। ইসলাম বা হিন্দুধর্ম কখনই এই স্বাধীনতা দেয়নি তাদের অনুসারীদের, না ধর্মের ক্ষেত্রে, না যৌনতার ক্ষেত্রে। আরব এবং হিন্দুস্তানের সাম্রাজ্যগুলো দীর্ঘস্থায়ী না হবার পিছনে এই অবদমিত আবেগের হাঁসফাঁস সংস্কৃতি একটা কারণ হতে পারে না কি? যে হাঁসের গলায় সারাক্ষণ লাগানো থাকে এক বা একাধিক ফাঁস, সে সোনার দূরে থাক, কোনো ডিমই পাড়ার কথা নয়।  

স্যার ক্লার্ক বলেছেন, পাশ্চাত্য বা ইওরোপীয় সভ্যতা গড়ে ওঠার পিছনে রাজা ও গির্জার উপরোক্ত টানাপোড়েন নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। তবে এটা ঠিক, পাশ্চাত্যে রাজার কথাই ছিল শেষ কথা। ফরাসি রাজা বা সম্রাটেরা, যেমন অষ্টম শতকের শার্লমাঈন বা অষ্টাদশ শতকের নেপোলিয়ন, পোপের কাছে আশীর্বাদ যেমন চেয়েছেন, তেমনি পোপকে তাঁরা ছেড়েও কথা বলেননি। চতুর্দশ শতকে প্রায় ৭০ বছর ভ্যাটিক্যানে নয়, পোপেরা থেকেছেন ফ্রান্সের আভিনিওঁ শহরে, ফরাসি রাজার ইচ্ছায়। 

ক্ষমতার এমন টানাপোড়েন পৃথিবীর অন্যত্র খুব একটা দেখা যায় না, যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় এই টানাপোড়েন কিছুটা আছে বটে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আফগানিস্তানে মৌলবাদী তালেবানেরা এখন ক্ষমতায়, পাকিস্তানের অস্তিত্ব পর্যন্ত তারা হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। ভারতে মোদিকে হিন্দুত্ববাদীদের অন্যায় আবদার কমবেশি মেনে নিতে হয়। বাংলাদেশেও মৌলবাদীদের সঙ্গে সরকারের একটা টানাপোড়েন আছে। সরকার কখনও তাদের সামনে নতজানু হয়, কখনওবা ছাই দিয়ে জিয়ল মাছের মতো তাদের ঘাড় চেপে ধরে। ‘পল্টনে ছিল আর্জেস বোমা, মতিঝিলে শুধু সাউন্ড। অক্ষত লাঠি, আধমরা সাপ, ভ্যাবচ্যাকা ব্লাডহাউন্ড।’ (ক্রমশঃ)। ফেসবুক থেকে