
প্রকাশিত: Tue, Jan 24, 2023 2:56 PM আপডেট: Sat, May 10, 2025 1:51 PM
সঞ্চয়, অপচয়, বিনিয়োগ আর বিলাসিতা নিয়ে ভাবতে হবে জীবনের শুরু থেকেই
আতিক খান
সঞ্চয় আর অপচয় দুটোই একে অপরের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। অপচয় করলে সঞ্চয় করা খুব কঠিন। আর যারা সঞ্চয় করেন তারা সহজে অপচয় করে না। আমি যে শুরু হতেই বিনিয়োগ আর সঞ্চয়ে অভিজ্ঞ ছিলাম তা মোটেই না। বরং সঞ্চয় করতে শিখেছি অনেক ঠেকে, বিভিন্ন বিনিয়োগে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে। প্রায় সময়ই আমি জমানো অর্থ প্রায় পুরোটাই খরচ করে ফেলতাম কিংবা বিনিয়োগ করে ফেলতাম। এরকম পরিস্থিতিতে কয়েকবার পড়ে এরপর বুঝেছি, অতিরিক্ত বিনিয়োগ কোনো ভালো ফল বয়ে নাও আনতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোতে বাটপারের ছড়াছড়ি। এমন ভূমিতে বিনিয়োগ করেছি, যা ১৮ বছরেও হাতে পাইনি। অদূর ভবিষ্যতে পাবো, সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তবে অপচয় বা বিলাসিতার স্বভাব আমার একেবারে নেই।
আমি একজন নন ব্র্যান্ডেড মানুষ। ব্র্যান্ডের কোনো কিছুতেই আমার আগ্রহ নেই। একটা ডকুমেন্টারিতে দেখেছিলাম, একটা ব্র্যান্ডের আইটেমে প্রোডাক্ট ভেলু থাকে মাত্র ৮-১০%। বাকিটা তাদের বিজ্ঞাপন, মডেলদের সাথে চুক্তি, মার্কেটিং খরচ, শো-রুম আর অন্যান্য খরচ তুলে আনার জন্য। তাই সবসময় প্রাধান্য দিই, আমাকে কীসে মানায় বা কী ব্যবহার করতে আমার ভালো লাগে। কলার বা আইটেমের স্টিকারে কোনো আগ্রহ পাই না। সমাজে কিছু মানুষ আপনি অবশ্যই পাবেন, যারা ব্র্যান্ড ছাড়া চলাফেরা করেন না, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা আড্ডাতেও তাদের আলাপ জুড়ে থাকে সব ব্র্যান্ডের গল্প। আমার বন্ধু সার্কেলেও আছে কয়েকজন। অনেক মহিলা তো ঘুমের ঘোরেও ব্র্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন। আর ব্যবহৃত জিনিসের প্রতিও আমার একধরনের মায়া তৈরি হয়, জিনিসটা নষ্ট বা ব্যবহারের অযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ফেলে দিতে পারি না বা বদলাই না। তারমানে আবার এই না যে, আমি আলমারিতে জিনিস জমাতে থাকি। প্রতি বছর কয়েক দফাতেই পুরানো কাপড় যাদের প্রয়োজন তাদের দিয়ে কমিয়ে ফেলি। ব্যবহৃত দ্রব্যের কিছু উদাহরণ দিইÑ আলমারিতে আমার এক-দেড় যুগ আগের পোশাকও আছে, যা স্ত্রী করে পরিধান করে অবলীলায় যেকোনো অনুষ্ঠানে চলে যাই। সারা বছর কোনো পোশাক তেমন একটা কেনার প্রয়োজন হয় না। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দেওয়া উপহারেই সারা বছর নিশ্চিন্তে কেটে যায়। মাঝে ৮ বছর কোনো ব্লেজার বা স্যুট কেনা হয়নি। দিব্যি কাজ চলে যাচ্ছিলো। এই বছর অবশ্য এনিভার্সারিতে বউ একটা কিনে দিয়েছে।
প্রথম স্মার্টফোন ছিল স্যামসাং এস-২, যা নষ্ট হওয়া পর্যন্ত ৪ বছর ধরে ব্যবহার করেছি। অনেক আগেই বন্ধুরা আইফোন ৪ ইউজ করত, তাতে প্রলুব্ধ হবার মতো কিছু লাগেনি। বর্তমান মোবাইলটার দাম ২৭ হাজার, যা ব্যবহার করছি ৩ বছর ধরে। আমার প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে, সামর্থ্য থাকলেও এর চেয়ে দামি মোবাইল কেনার প্রয়োজন বোধ করিনি। স্মার্টফোনের অধিকাংশ ফাংশনই কেউ ইউজ করে না। বেশির ভাগ মানুষ দামি ব্র্যান্ড কিনে শো অফের জন্য।
দুই লাখ টাকার সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি চালিয়েছি প্রায় ৪ বছর। বড় রিপেয়ারের প্রয়োজন হলে সেটা ছেড়ে দিয়ে বর্তমান গাড়িটা নিয়েছিলাম ১০ বছর হলো। অনেক মডেল আসলে গেলেও নিজের গাড়িটাই আমার কাছে সবচেয়ে আরামদায়ক মনে হয়। মায়ার কারণেও গাড়িটা বদলাতে পারি না। বর্তমানে ব্যবহৃত বেল্ট স্যান্ডেলটা ২০১৮ এর ঈদের। ২০১৯ এর ঈদ কেটেছে শিপে আর গত দুই বছর করোনার কারণে সেরকম কেনাকাটাও হয়নি। তাতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ব্যবহারযোগ্য আছে যতোক্ষণ, পায়ে দিতে সমস্যা নেই। শেষবার জুতা কিনেছিলাম ৫-৬ বছর হলো, ভালো কন্ডিশনে আছে তাই আর কিনি নাই। সাম্প্রতিক ঈদে অবশ্য জুতা উপহার পেলাম জুমানা হতে আর স্যান্ডেল শাশুড়ি হতে।
ও হ্যাঁ, স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরে প্রায়ই শ্বশুরবাড়িও যাওয়া আসা করি। দাওয়াত বাদে, যেখানে অন্যান্য অতিথিরাও আসে। এদিক হতে আমার সহধর্মীনিও আদর্শ। মেকআপ যা করার বাসাতেই, পার্লারে দৌড়ায় না। বড় মেয়ের শৈশবের সব কাপড় খুব যত্নে রেখে দিয়েছিল, যা এক যুগ পর ছোট মেয়ে পড়ছে। দামি পোশাক বা গহনা নিয়ে কোনো বিলাসিতা বা উচ্চবাচ্য নেই। ওর মোবাইলটার দামও ১৭-১৮ হাজার মতো। ব্যাংকের চেকবই আমি নিশ্চিন্তে ওর হাতে দিয়ে শিপে চলে যাই। অপচয় বা বিলাসিতা না করলেই বাড়তি অর্থ সঞ্চয় করার সুযোগ তৈরি হয়। হ্যাঁ, স্বর্ণ, নিরাপদ প্লট, ফ্ল্যাট, ডিপিএস, লাইফ ইন্সুরেন্স ইত্যাদিও একধরনের সঞ্চয়, যা নিরাপদ হলে বেশ ভালো বিনিয়োগও বটে। এই বিনিয়োগ বার্ধক্যে বা মধ্যবয়সে বেশ কাজে লাগতেও পারে। তবে জরুরী মুহূর্তে নগদ সঞ্চয়ের বিকল্প কিছুই না।
আমাকে কে কি ভাবল, কে কি বলল তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। এগুলা আমি গায়েও মাখি না। আমার প্রয়োজনের মুহূর্তে কিন্তু এসব মানুষদের অধিকাংশই আমার পাশে থাকবে না। আর বিলাসিতা কিংবা অপচয় ইসলাম ধর্মেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বারবার। তাই সঞ্চয়, অপচয়, বিনিয়োগ আর বিলাসিতা এসব নিয়ে ভাবতে হবে জীবনের একদম শুরু হতে। তাহলে জীবনকে গুছিয়ে নেয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে অনেকসময় ভুলও হতে পারে, আর সেই ভুল হতে শিক্ষা নেয়াটাও জীবনের অংশ।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
