প্রকাশিত: Tue, Jan 24, 2023 3:40 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 12:32 PM

শিশুর মলিন মুখ

ইকবাল আনোয়ার

শিশুরা জাতির প্রধান সম্পদ। তারাই ‘আগামীর দেশ’। তাদের পাঠদান পদ্ধতি, পাঠের  বিষয় এসব ঠিক করার জন্য সবচে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো রকম গাফিলতি, হেলাফেলা বা জোর করে তাদের কিছু গিলিয়ে দেবার চেষ্টা হবে মূলত ‘বুমেরাং’।  শিশুর  কাছে উপস্থাপন করতে হবে  বিশ্ব, দেশ, সমাজ সংশ্লিষ্ট  তথ্য, কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সিদ্ধান্ত নেবে শিশু, তার বয়সকালে। পদ্ধতিটি হবে নৈর্বিত্তিক।

কোনো বিষয় শিশুকে পড়ানো হবে বা কতো রকম শিক্ষা ব্যবস্থা দেশে থাকবেÑ এসব নিয়ে মন্তব্য করা বা প্রস্তাবনা পেশ করা আমার কাজ নয়, এটা আমার বৃত্তের বাইরে। তবে শিশু চিকিৎসক হিসাবে আমার কাছে যা ধরা পরে নিত্যদিন, তা থেকে কিছু বলা; আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে। শিশুকে শেখানোর উদ্দেশ্য হবে, তাকে সুনাগরিক হিসাবে, সৎ, সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, আত্মমর্যাদায় অধিষ্টিত করার মানসিকতা দিয়ে গড়ে তোলা। শিশু শিক্ষায় কোনো বড় ছোট ব্যবধান করা, কোনো রকম বৈষম্য করা যাবে না। শিশুকে ‘চামচ কেটে শিক্ষা নয়, নিজ থেকেই সে যেনো জানতে, পড়তে উৎসাহিত হয়’ তার মনে এমন আলো জ্বালাতে পারে যে শিক্ষা; তাই তাকে দিতে হবে। যাক,  এসব কথা সকলেই জানেন। আমার বলা বাহুল্য মাত্র। 

তবে এ কথাগুলো বার বার বলতে হবে। নিত্যদিন আমাদের এ বিষয়টি দারোয়ান রাখার মতো গার্ড দিতে হবে। আজ একটি শিশুর প্রেসক্রিপশনে আমি লিখে দিয়েছি- শ্রেণি শিক্ষকের হাতে বেত থাকতে পারবে না। মাকে বলেছি, এটা প্রতিষ্ঠানে দেখাতে, প্রয়োজনে আমাকে মোবাইল করতে। এমনটি করতে আমি বাধ্য হয়েছি। কেননা আমি দেখছি, আমার সামনে একটি সম্ভাবনা কুঁড়িতেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে নিয়ে আসা শিশুটি এ বয়সেই (তৃতীয় শ্রেণীতুল্য) ভয় রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং দীর্ঘ ইতিহাস নিয়ে আমার কনসেন্ট্রশন এ বিষয়ে বর্তিয়েছে। এটি কোন্ পদ্ধতির শিক্ষাঙ্গন তা বলতে যাবো না। কেননা, সকল শিক্ষক একরকম না, তেমনি প্রতিষ্ঠানও দায়ী নয়। শিশুকে তুই বলে সম্বোধন, শিশুর সামনে বেত রেখে বসা, বেত মারা, ধমক দেয়া,  নিন্দা করা, পড়া পারেনা বলে তিরস্কার করা,

পরিবারের তরফেও, এক অপরাধ। আখেরের জন্য বা সুধারণা বশত,  শিশুর অনিচ্ছা সত্যেও জোর করে কোন বিশেষ পড়া পড়তে দেওয়া কতোটা সমীচীন, বিজ্ঞজন তা বিচার করবেন। যে শিক্ষায় শিশুকে কেবল মুখস্ত করতে হয়, জোর করে  গেলাতে হয়, সেখানে প্রাণ থাকে না। শিশু জানতে চায়, তার চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়, সে এক অনন্য দার্শনিক, শিশু আনন্দ চায়, আলো চায়।  আলোর বদলে যদি অন্ধকারের আভরণই পরানো হয়, তবে তা  শিশু-অধিকার হরনের পাপ তুল্য। বড় বেশি কষ্ট পাই, এইসব হতভাগ্য শিশুরা আমার সামনে যখন মনমরা হয়ে বসে থাকে। তাদের মলিন মুখ দেখে আমি আগামীর দেশ নিয়ে চিন্তিত হই। লেখক: চিকিৎসক