
প্রকাশিত: Tue, Jan 24, 2023 3:41 PM আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 5:25 AM
নিষিদ্ধ করতে গিয়ে প্রসিদ্ধকরণ
রাজু আলউদ্দিন
আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার পক্ষে বাংলা একাডেমি যে অজুহাতগুলো দেখিয়েছে তা নতুন কিছু নয়, এর আগেও একাডেমি এমন কাজ বহুবার করেছে। কথা হলো একটা বই যদি দেশ ও জাতিবিরোধী বক্তব্য নিয়েও হাজির হয়, সেটাকে খণ্ডন করার জন্য লেখাই হচ্ছে সর্বোচ্চ ও শোভন উপায়। গায়ের জোরে বা আইনের জোরে বইটিকে হয়তো সাময়িকভাবে প্রতিহত করা যায়, কিন্তু সেটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। যে-বক্তব্যের জন্য ফাহামের বইটির প্রকাশক হিসেবে তাদের স্টল বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে তা হয়তো মেলায় বিক্রি করার সুযোগ পাবে না, কিন্তু মেলার বাইরে অন্য সময়ে ঠিকই বিক্রি করতে পারবে যেহেতু বইটি আইনত নিষিদ্ধ হয়নি এখনও পর্যন্ত। এমনকি আইনত নিষিদ্ধ বইও, ইতিহাস সাক্ষী, অপঠিত থাকার পরিবর্তে বরং বেশি পঠিত হয়েছে, কারণ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের চিরকালের কৌতূহল।
অতএব, স্টল বরাদ্দ না দিয়ে বা আইনত নিষিদ্ধ না করে বইটিকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিলেই বরং বইটি জীবনীশক্তি( অর্থাৎ পাঠককে যদি শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুকূল উপাদান ধরা যায়) হারিয়ে একসময় তা এমনিই মৃত্যুবরণ করবে। একাডেমি যা করেছে তাতে করে বইটির প্রতি পাঠকের মনোযোগ তৈরি করে বইটির বহুল প্রচার, প্রসার ও পাঠের বুলান্দ দরোয়াজা খুলে দিয়েছে। একাডেমি সরকারের অনুকূলে কাজ করতে গিয়ে উলটো সরকারের হিতের বিরুদ্ধেই কাজ করেছে। অর্থাৎ, সরকারের সমালোচনা বা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কুৎসা অগোচর করার লক্ষে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে, এখন তা আরও বেশি গোচরে আনার সুযোগ করে দিলো। এতে করে এই সরকার বাকস্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানে আছেÑ এরকম ধারণা প্রচারের সুযোগটা লেখক ও প্রকাশক এবং তাদের সঙ্গে সহমর্মিতার কারণে আরও অনেক লেখক-পাঠকও নেবেন।
সবমিলিয়ে বিষয়টি হিতে বিপরীতই হয়ে উঠলো না কি? আমি মনে করি, এমনকি রাষ্ট্রবিরোধীও যদি হয়, এমন বই নিষিদ্ধ না করে ওটাকে স্বাভাবিক গতিতেই চলতে দেয়া উচিত। চিন্তুাকে চিন্তা দিয়েই প্রতিহত করা উচিত। কারণ কোন চিন্তাকেই শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায় না, যায়ও নি। এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাসের মতো গোড়া ধারণার বিরুদ্ধে ভিন্নমতের এতসব ধারণা তৈরি হয়েছে যে তা শত শত বছর ধরে টিকে আছে। ইসলামের মূল ধারণার বিরুদ্ধে মুতাযিলা সম্প্রদায়ের আবির্ভাব তরবারি দিয়ে প্রতিহত করতে গিয়ে মুতাযিলা চিন্তার ধারাকে কি নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয়েছে?
চার্চের মতো প্রবল প্রতাপের বিরুদ্ধে গিয়ে এরিস্টার্কাস, কেপলার, ব্রুনো, গ্যালিলিওকে মৃত্যুদণ্ড বা শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে তাদের ভাবনাকে মুছে ফেলতে পারেনি। ইউরোপে বিজ্ঞানমস্কতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে চার্চ ও রাষ্ট্র কী না করেছে? তাই বলে বিজ্ঞানের গতিকে রোধ করা যায়নি। আবার এটাও সত্য যে মানুষের ধর্মান্ধতাকেও বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে উচ্ছেদ করা যায়নি। ভাবনা একবার জ্যামুক্ত হয়ে গেলে সেটা তার লক্ষ্যে গিয়ে যদি না-ও পৌঁছায়, সেটা অন্তত আর কখনোই উৎসে ফিরে আসে না। আমি ঘোরতরভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে, কিন্তু কেউ যদি সেই স্বাধীনতার বিরোধিতা করে আমি তার কথা শুনবো, কিংবা সময়ের অপচয় হবে মনে করে শুনবোই না। কিংবা যদি শুনিও, আমি তার ধারণাটি ভুল প্রমাণের চেষ্টা করবো। তর্ক করবো, বিরোধিতা করবো।
ফাহামের অনেক কথাই আপত্তিকর, এমনকি অরুচিকরও। কিন্তু আমি তাকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। পাঠকদের রুচি উন্নত করার দিকেই একাডেমির মনোযোগ দেয়া উচিত। নিষিদ্ধ করা মানেই তার যে-‘শক্তি’ ছিল না, তাকে সেই ‘শক্তি’র অধিকারী বলে পরোক্ষে এক ভ্রমাত্মক স্বীকৃতি দেয়া হয়। ফাহামের কথা আমি শুনেছি, তার পোস্টও আমি দেখি, কিন্তু আমি কখনোই তাকে ভাবনার জায়গা থেকে নির্ভুলতো মনে করিই না, বরং বিভ্রান্ত, পক্ষপাতদুষ্ট আর অকারণ বিরোধিতার জ্বরে ভোগা একরোখা প্রকৃতির মানুষ বলে মনে করি। কিন্তু ফাহামকে আমি নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই।
সরকারের যে জায়গাটায় সবচেয়ে আগে এবং বেশি মনোযেগা দেয়া উচিত তাহলো শিক্ষাব্যবস্থার সত্যিকারের আধুনিকায়ন ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন। এটা করতে পারলে আর কোনো বইকেই নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পরবে না। কারণ উত্তম এক শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রগতিশীল পাঠ্যপুস্তক থেকে এমন সব শিক্ষার্থী-পাঠক বেরিয়ে আসবে যারা সঠিক, কার্যকরী ও প্রতিভাদীপ্ত বইগুলোই খুঁজে নেবে পাঠের সত্যিকারে আগ্রহ থেকে।
সরকারের বা একাডেমির এই অমূলক ভয় থেকে বেরিয়ে আসা উচিত যে স্বাধীনতাবিরোধী প্রচারের কারণে বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী সেই প্রচারে বিশ্বাস করবে এবং স্বাধীনতা বিরোধী হয়ে উঠবে। যদি তাই হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে মানুষকে স্বাধীনতায় এতটা দীক্ষিত করতে পারেনি বা স্বাধীনতার ধারণাটিকে তাদের মনে এতটা পাকাপোক্ত করতে পারেনি যে তা সহজেই অপপ্রচারে ফলে পক্ষ পরিবর্তন করে ফেলবে। এই দেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামী অন্য যে-কোনো রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে সবচেয়ে কম আসন পায়। সুতরাং স্বাধীনতা হারিয়ে যাওয়ার এত ভয় কিসের? তবে স্বাধীনতার সুরক্ষার প্রয়োজন আছে অবশ্যই। সেটা মননের শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে করলেই কেবল সুরক্ষা পাবে। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
