প্রকাশিত: Sun, Jan 29, 2023 4:03 PM
আপডেট: Sat, May 10, 2025 3:24 AM

পুরস্কার ও শিল্প-সাহিত্য

কামরুল আহসান: পুরস্কার পাওয়া এক অর্থে ভালো যে তাতে কিছুটা প্রচার বাড়ে। যাদের অনেকে চিনতেনই না তাদের কিছুটা  চেনাজানা হয়। তা ছাড়া কিছু টাকাপয়সা পাওয়া গেলে কাজে লাগে। তাছাড়া পুরস্কার আর কী কাজে লাগে? শিল্প-সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার সে নিজেই। অর্থাৎ তার সাধনায় নিমজ্জিত থাকা। জীবন তো ক্লান্তিকর একটা ব্যাপার। একঘেয়েমি ছাড়া জীবন আর কী? জীবনের এই ক্লান্তি দূর করে দেয় শিল্প-সাহিত্য। শিল্প প্রতি মুহূর্তে জীবনকে নতুন করে হাজির করে। 

সবার ক্ষেত্রে এ কথা সত্য নয় মোটেই। তাই সবার পক্ষে শিল্পের রসস্বাদন সম্ভব হয় না। যারা জীবনের ক্লান্তির স্পর্শ পায় তাদের কাছেই ধরা দেয় শিল্পের দেবী। কথা হচ্ছে কারো কারো কাছে কেন জীবন একঘেয়েমির দীর্ঘ যাত্রা মনে হয়? উত্তরটা দিয়ে গেছেন জীবনানন্দ দাশ অনন্য সাধারণ এক কবিতায়: অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়/আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/খেলা করে/আমাদের ক্লান্ত করে/ক্লান্ত ক্লান্ত করে...।

যাদের জীবনে এই ক্লান্তি নাই তারা এক অর্থে ভাগ্যবান এই শর্তে যে অর্থ-বিত্ত নিয়েই তারা সুখী হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত শিল্পী যিনি তার এতে শান্তি হয় না, সে চায় প্রতি মুহূর্তে নতুন রঙ, নতুন জীবন। ঈশ^রের জগতকে সে পুনঃনির্মাণ করতে চায়, নিজেকে ঈশ^রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করায়, নিজেকেই ঈশ্বর হিসেবে ঘোষণা করতে চায়। নিজেকে যে ঈশ্বর  হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় কোন পুরস্কারে তার আর সান্তনা হয়! তাই পুরস্কার নিয়ে যে শিল্পী মাথা ঘামায় সে আদতে শিল্পীই নয়। সে সাধারণ সামান্য মানুষ। নিজের প্রাপ্তি নিয়ে সুখী। 

প্রকৃত শিল্পী কখনো সুখী হতে পারেন না। যখনই তিনি সুখী হবেন তার শিল্পসত্তার মৃত্যু ঘটবে। ব্যর্থতা, রক্তপাত, যাতনাই তো শিল্পীর জননী।  এটাই শিল্পর নিয়তি। আজকাল সবাইকে সুখী করার প্রকল্প চালু হয়েছে। শিল্পীও এই ফাঁদে পা দিয়েছেন। আর তাদের কাছে সুখ কী! হায়, অমরলোকের সন্ধান যে পায় নি সে কী জানে সুখ ও দুঃখ কী! লেখক ও সাংবাদিক