আশিক নূরী : [১] আব্দুল জব্বার একজন সঙ্গীত শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়। [২] আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের নিকট। 

[৩] আব্দুল জব্বার ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে তালিকাভুক্ত হন এবং ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৮ সালে এতটুকু আশা ছবিতে সত্য সাহার সুরে তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রবীন ঘোষের সুরে তিনি পীচ ঢালা পথ (১৯৭০) ছবিতে ‘পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি’ এবং নাচের পুতুল (১৯৭১) ছবির শিরোনাম গান ‘নাচের পুতুল’ এ কণ্ঠ দেন। ১৯৭৮ সালে সারেং বৌ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে আব্দুর জব্বারের গাওয়া ‘ও..রে নীল দরিয়া’ গানটি দর্শকপ্রিয়তা পায়। ২০১৭ সালে এই সঙ্গীত শিল্পীর প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম কোথায় আমার নীল দরিয়া মুক্তি পায়। 

[৪] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আব্দুর জব্বার বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অংসখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। [৫] আব্দুর জব্বার বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৬) ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩)’, ‘বাচসাস পুরস্কার (২০০৩)’ ও ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার’ অর্জন করেন। আব্দুর জব্বার ৩০ আগস্ট ২০১৭ সালে মারা যান।