
প্রকাশিত: Sun, Feb 12, 2023 4:39 PM আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:48 PM
আমার কাবা ঘর দর্শন এবং আল্লাহর কাছে মাথানত করা
ফারহান হাবিব : আমি এখনো ঘোরের মধ্যেই আছি। কী ঘটেছিল কাবার ভেতরে আমি জানি না। এতোটা ধার্মিক আমি এখনো না। আমি আল্লাহু আকবার বলে কাবা ঘরে ঢুকে গেলাম। প্রথমে কাবা ঘর দেখেই মনে মনে বলেছি, আমার সব মন বাসনা পূরণ করে দাও। তারপর কাছাকাছি গেলাম। খুব কাছে গেলাম। শুরু করে দিলাম। বিসমিল্লাহ আল্লাহ হু আকবার বলে। কাবাকে প্রদক্ষিণ করার মূল সারমর্ম হলো, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করা এবং তার কাছে ক্ষমা এবং করুণা চাওয়া। আমি তাই করলাম। এটা এমন কঠিন কিছু মনে হলো না আমার। কারণ কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করতে যেসব দোয়া পড়তে হয় তার সবগুলো সুরার সারমর্ম সেটাই। আমি আরবিতে পড়লাম এবং বাংলাতেও কখনো কখনো বলতে লাগলাম। রুকনি ইয়ামানি থেকে হাজরে আসওয়াদ প্রদক্ষিণ করার সময় পড়তে হয় ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা’ দোয়াটি, অর্থ হচ্ছে আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। এভাবে পড়তে পড়তে আমি ৭ বার তাওয়াফ সম্পন্ন করি। এরপর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ি, এরপর মুনাজাত করি। কোরআনের সুরা বাকারায় কাবা ঘরের কথা বলতে গিয়ে বলা আছে তোমরা মুসজিদুল হারামে এসে আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করো যেমন তোমরা তোমাদের বাবা মাকে স্মরণ করো।
আমি এই লাইনটা ওমরা করার তিনদিন পরে পড়লেও ওমরা করার দিন আমি একইভাবে স্মরণ করছিলাম সৃষ্টিকর্তাকে। আমার বারবার মনে হচ্ছিলো, আমার বাবা মা এবং আমার বোন দুলাভাই না থাকলে আজকে আমি এখানে আসতে পারতাম না। আমি অঝোরে কান্না করলাম। আমি আমার আশেপাশে প্রত্যেকের কল্যাণ কামনা করলাম। এরপর সাঈ করলাম। অর্থাৎ সাফা মারওয়া ৭ বার প্রদক্ষিণ করলাম। ততোক্ষণে পায়ে ব্যথা। আমি আল্লাহর কাছে বললাম, আল্লাহ তুমি সহজ করে দাও। আল্লাহ সাথে সাথে সহজ করে দিলেন। আমি ওমরা সম্পন্ন করলাম। আগের রাতে মক্কা নগরীতে একা ঘুরছিলাম উ™£ান্ত লাগছিলো। রাতে শোবার আগে আল্লাহকে বলেছি, আল্লাহ তুমি আমার সকালটা সুন্দর করে দাও। আল্লাহ সত্যি সত্যি সকালটা সুন্দর করলো। এবং আমি চুল ফেলে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অত্যন্ত আনন্দের সাথে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেলাম। আমার মনে হলো আমার নতুন জন্ম হয়েছে। আর একটা বিষয় মনে হলো, কাবা ঘরের ভিতর অনেকগুলো শিশুর মতো আল্লাহ হয়তো আমাকেও একজন শিশু ভেবেছেন। অথবা আমি নিজেকে। একজন শিশু আল্লাহর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন এবং আল্লাহ তার পথকে সহজ করে দিয়েছেন।
মুসলিম রীতি অনুসারে এহরামের কাপড় পড়ার পর কোনো ধরনের রাগ, ক্ষোভ, অহংকার, কামনা, ঘৃণা ইত্যাদি যতো বিষয় আছে তা থেকে দূরে থাকতে হয়। এমনকি একটা পিঁপড়া হত্যা, গাছের পাতা ছেঁড়াও নিষেধ। অর্থাৎ জন্মের পর আপনি যেভাবে নিঃষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে আসেন এখনও ঠিক সেভাবে থাকতে হবে। পার্থক্য হলো জন্মেরপর আপনার নিজস্ব কোন চিন্তা নেই, আর এখন আপনি জেনে বুঝে সচেতন হয়ে সকল ধরনের পাপাচার থেকে দূরে থাকবেন। এইসব থেকে দূরে থাকতে আপনাকে ধর্ম পালন করতেই হবে আমি বলছি না। কিন্তু আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেটি আমি এখানকার মুসলিমদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আমরা আসলে ধর্মটাকে কীভাবে দেখবো। কাবায় আজান দিলে যেন কি হয়। হয়তো পরিবেশ, মানুষের নিরবতা, বিশাল বিশাল স্পিকার, আতরের সুঘ্রাণ সব কিছুই আপনাকে ভিন্ন রকম বোধ করাতে পারে। আবার এভাবেও বলা যায় নামাজ শুরুর সময় ‘ইস্তাউ’ যখন বলে, অর্থাৎ সোজা হয়ে দাঁড়ান বলারপর মাটির দিকে তাকিয়ে যেভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করলাম তখন একটা বিষয়ই মনে হলো, সমর্পন। মাথানত কেবল আল্লাহর কাছেই করা যায়। আর এই সমর্পনের মধ্য দিয়ে নিজের মধ্যে বিনয় বিষয়টি জন্ম নেয়। যা সবার থাকা উচিত।
এই অল্প কিছু সময়ের অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা আমি সারা জীবন ধরে রাখতে পারবো কিনা সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। নিশ্চয়ই সাফা মারওয়া দৌড়ানো যে বিধান তার পেছনে একজন মায়ের তার সন্তানের জন্য তীব্র ভালোবাসার গল্প লুকায়িত। যে ভালোবাসার পেছনে আছে এক মায়ের তার সন্তানের জন্য তপ্ত পাথুরে পাহাড়ের বুকে অমানবিক পরিশ্রম। অথচ এখন সাঈ করতে গেলে যে স্থানটিতে হযরত হাজেরা (রা.) দৌড়িয়েছেন সেই স্থানটিতে কেবল পুরুষদের দৌড়াতে হয়। এই স্থানটিতে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা এবং দৌড়ানো খুবই কষ্ট সাধ্য। এই কষ্টের কাজটি সেসময় কেমন কষ্টের ছিলো সেটি অনুধাবন করতেই হয়তো এই রীতি। পাশাপাশি এও বলা যায় নারীদের দৌড়াতে না বলে কেবল পুরুষদের দৌড়ানো বিধান হয়তো এ জন্য যে পুরুষ যেন নারীর বেদন বুঝতে পারে। মায়ের যে জাত, স্ত্রীর যে জাত, বোনের যে জাত, কন্যার যে জাত সব থেকে বড় কথা মানুষ হিসেবে তার যে প্রাপ্য সম্মান বিপরীত লিঙ্গ থেকে পাওয়ার সেটি অনুধাবনের জন্যই হয়তো এই বিধান। অথচ এই দেশে কি বাজে কথাই না বলা হয় নারীদের নিয়ে। এসব বিষয়ই আমার মাথায় ঘুরলো। আমি আমার মাকে ভিডিও কলে কাবা দেখালাম। স্ত্রীকেও দেখালাম। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। আমি শিশুর মতো কাঁদলাম আমার স্ত্রীর সামনে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম তাদের প্রত্যেকের কাছে।
কাবা আসলেই আল্লাহর ঘর। এখানে কেবল আল্লাহর প্রশংসাই করা হয়। যেখানে মাফ চাওয়া হয়। কল্যাণ কামনা করা হয়, বাকিটা তার উপর। আমি ধর্মীয় নেতা নই। ধর্ম প্রচার করাও আমার কাজ নয়। ২০২০ সাল থেকে আমি সংশয় বাদী থেকে ধীরে ধীরে আস্তিক হতে উঠি। এরপর কাবায় গিয়ে আমার মূল পরিবর্তনটা লক্ষ করি। আমার মনে হলো এই কথাগুলো শেয়ার করা দরকার। কাবার যে শিক্ষা সেই শিক্ষা আমাকে হত্যা করতে, দুর্নীতি করতে, জুলুম করতে, নারীদের অপমান করতে, ভিন্ন মতের মানুষকে খারিজ করতে বারণ করেছে। আমার প্রগতিশীল অথবা নাস্তিক অথবা সংশয়বাদী বন্ধুদের মধ্যে নিশ্চয়ই এখন আলোচনা হবে। আমি তাদের বলবো আপনারা যারা ভিন্ন মতকে গ্রহণ করার মানসিকতা সত্যিকার অর্থেই রাখেন এখন থেকে তারাই আমার প্রকৃত বন্ধু বলে বিবেচিত হবেন। অর্থাৎ এই নতুন আমাকে নতুন করেই গ্রহণ করতে হবে। এর বাইরে আমরা কেউ কারো দাস নই যে আমাদের একে অপরকে খুশি করে চলতে হবে। আল্লাহর দুনিয়ায় সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠন যদি মূল লক্ষ্য হয়, তবে ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস এখানে মুখ্য নয় যতক্ষণ না সে ধর্মকে যেনতেনভাবে রাজনীতিতে ব্যবহার করছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমি এখন সে কৌশল জেনেছি যে, কিভাবে নানা সংকটেও একটি শান্তির জীবন যাপন করতে পারা যায়। অর্থাৎ সমর্পন। আমি প্রার্থনা করি, আমৃত্যু আমি যেন সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারি। যদিও যে অনুভূতি আজ মনের ভিতর তার কিছুই প্রকাশ করতে পারিনি, যেটা অসম্ভব বা প্রকাশেরও ঊর্ধ্বে, তবু বলবো অদ্ভুত অসাধারণ দুটি দিন কেটেছিল কাবায়। আমি আবারও যেতে চাই সেখানে। আল্লাহু আকবার। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
