
প্রকাশিত: Mon, Feb 13, 2023 4:16 PM আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:45 PM
দিবস-রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি
অজয় দাশগুপ্ত : পৃথিবীর প্রথম এক্সরে এক্সিবিশন। কৌতূহলী দর্শকের ভেতর একজন বৃদ্ধ আর একজন তরুণ খুব মনযোগ সহকারে একটি ছবি দেখছিলেন । ভাবাবেগ আপ্লুত যুবকটি বেশ আপন মনে জোর গলায় বলছিলো, ও মাই গড একি দেখছি আমি! এতো দেখি হৃদয়। শান্ত প্রবীণ তার উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য আলতো করে মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, বাবাÑ একটু ভালো করে দেখো , দুনিয়ার কোনো যন্ত্র নাই যা হৃদয়ের ছবি দেখাতে পারে। এ কেবল হাঁড়ের ছবি।
হৃদয় কেমন বা দেখতে কোন আকারের কেউ জানে না। অথচ এই হৃদয় হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় ও আলোচিত। ভালোবাসা যদি চোখ হয় তো হৃদয় তার দৃষ্টি। একটি ছাড়া বাকিটা অর্থহীন। আমরা যারা প্রবীণ, আমাদের বয়স যখন ষাট পেরিয়ে আমাদের এই হৃদয়যন্ত্রটিকে আগলে রাখতে হয়। সে ভালো না থাকলে সবকিছু ভালো থাকে না। সে ভালো থাকলে আর সতেজ থাকলে মন চিত্ত আত্মা সব ভালো থাকে। ওর কাজই হচ্ছে ভালোর সাথে থাকে। যার নাম ভালোবাসা।
ভালোবাসা বিষয়টি কতো যুগে কতোভাবে যে পাল্টালো। আমাদের বড় হবার সময় ভালোবাসা ছিল আরেক ধরনের। তার আগে যাদের জীবন দেখেছি তাদের কাছে ভালোবাসা ছিল দুষ্প্রাপ্য মহার্ঘ কিছু। বস্তুত বিয়ে করার আগে তাদের জীবনে ভালোবাসা বলে কিছু ছিলো না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী এখনো অন্দরমহলে বন্দী। আর তখন তো তাদের অবরোধবাসিনী ছাড়া আর কোনো পরিচয়ই ছিলো না। সেসব অবরোধবাসিনীরা কিন্তু আজকালকার নারীদের চাইতে একদিকে ভাগ্যবতী ছিলেন। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন স্বামী সোহাগী। স্বামীদের ভেতর যারা ধনবান বা সম্পদশালী কিংবা জমিদার ছিলেন তাদের অবশ্য বহুগামিতার বাতিক থাকতো। তাতে কী? দিনশেষে বাড়ি ফেরা স্বামী-স্ত্রীর একসাথে থাকা ছাড়া আর কোনো বিনোদন ছিলো না। ফলে সম্পর্ক ছিলো মধুর। অম্লমধুর হলেও মধুর।
আমাদের সময় তা বদলে গেলো খানিকটা। আমরা তখন নবীন। সার্ট পাতলুন চুলের স্টাইলের মতো পাল্টে গেলো জীবনযাত্রা। তখন বাড়িতে টেলিফোন সেটের সময়। সময় সাদাকালো টিভির। ছেলে মেয়েদের একসাথে পড়াশোনার সুযোগও খুলছিল তখন। চোখে চোখ রাখার সে সময়কালে ভালোবাসার নাম ছিল পবিত্রতা। এমন না যে আমরা চুমু খাইনি। এমনও না যে আমরা মিলিত হবার চেষ্টা করিনি। কিন্তু সে মিলিত হবার চেষ্টা মানে হয়তো একটু জড়িয়ে ধরা বড় জোর দু’একটা চুম্বন বিনিময়। তখন কি আর এমন বায়বীয় জগত ছিলো যে চাইলেই কাউকে ইচ্ছেমতো পাওয়া যেতো বা যোগাযোগ করা যেতো? ধৈর্য আর চুপচাপ সময় গোনার ব্যতিক্রম ছিল না হাতে। কারণ চাওয়ার উপায় বা পদ্ধতি যেমন ছিল না তেমনি পাওয়া ছিল আরো দূর অস্ত। তবু ভালোবাসাই ছিল সবার আরাধ্য আর কামনা। হাতে লেখা চিঠি সে চিঠি কষ্ট করে পৌঁছানোর পর দু’একবার দেখা এই যুগের মানুষ আমরা।
পাল্টে যাওয়া পরের প্রজন্মে ভালোবাসা আর একটু তরল হয়ে গেলো। ঘনঘন দেখা আর ডেটিংয়ের ধারা চালু হতে শুরু করলো। আজকারের মতো এতটা খোলামেলা বা প্রকাশ্যে না হলেও ধারা ব ইতে শুরু করেছিল আমাদের পরের প্রজন্মে। তারা ভালোবাসা বিষয়টি গোপন থাকতে দিলো না। তাদের সময়কালে সমাজ বুঝতে শিখছিল ভালোবাসা কোনো পাপ কিছু নয় । শুধু তাই নয়, ভালোবাসার স্বীকৃতিও দিতে বাধ্য হলো অভিভাবকেরা। যদিও এই স্বীকার করা না করার খেলা আজো চলছে। আমি এটাকে খেলা বললাম এই কারণে দু’জন মানুষ পরস্পরেকে পছন্দ করে, জীবন বাঁধতে চায় এক গ্রন্থিতে, তাদের মন বলে একে অপরকে ছাড়া বাঁচবে না। এমন একটা মনোজগতকে পায়ে দলে অস্বীকার করার নাম তো এক ধরণের খেলাই। মরণ খেলা। এই জায়গাটা আমাদের সময়কালেও ছিল। প্রবলভাবে ছিল। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম সেটা মানেনি।
তারপর তো ডিজিটাল যুগ। গোপন থাকবে কী? ভালোবাসা জ্যান্ত এক দিবস হয়ে গেলো হঠাৎ। ভালো মন্দ এসব তর্ক করে লাভ নাই। এখন এটাই তারুণ্যের প্রধান দিন। এমনকি বয়সী মানুষেরাও এই দিনটি উদযাপন করেন। বাংলাদেশে এই দিবসের সূচনাকারী মানুষটিকে এখন আর কোথাও দেখি না। সম্পাদক সাংবাদিক শফিক রেহমান ছিলেন বিলেত প্রবাসী। আধুনিক মনের মানুষ। পরবর্তীকালে রাজনীতি দল আর বিশ্বাস তাকে কোথায় নামিয়ে এনেছিল, সে সবার জানা। কিন্তু সত্য এই মানুষটি আমাদের তারুণ্যকে শিখিয়েছেন ভালোবাসার আনুষ্ঠানিকতা হতে পারে। ভালোবাসা একটি উদযাপনের দিনও বয়ে আনতে পারে কর্মব্যস্ত জীবনে।
অতঃপর ডিজিটাল বাস্তবতা মানেই বহুজাতিক কোম্পানি। বহুজাতিক বাণিজ্য। এখন দুনিয়া মানুষের হাতের মুঠোয়। এক নিমিষে ঘুরে আসা যায়। এই বায়বীয় পরিভ্রমণ মানুষকে ঋদ্ধ করেছে। জানাচ্ছে চোখে দেখাচ্ছে পুরো পৃথিবী। ফলে ভালোবাসা দিবসের নাম হয়ে গেলো ভ্যালেনটাইন ডে। সন্ট ভ্যালেনটাইনের কাহিনি যাই হোক দিবস আর ডে মিলে জমজমাট হয়ে উঠল গোলাপের বাজার। একটি কার্ড একটি গোলাপ যে কত শক্তিশালী হতে পারে ভ্যালেনটাইন ডে না এলে অজানা থেকে যেতো। আমি এতে মন্দ কিছুই দেখি না। বরং ভালোবাসার এই পোশাকী আবরণ সৌন্দর্য আর বিনিময় একধরনের সুবাস ছড়ায়। সেদিনটি হয়ে ওঠে দারুণ সুগন্ধময়।
মাঝে মাঝে মনে হয় সেই ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েটির কথা। জীবনে হয়তো এটিই তার শেষ গোলাপ। যে যুবক জানেই না তার ভবিষ্যৎ কী বা আদৌ সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে কি না সেও গোলাপ হাতে স্পর্ধিত ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়ায়। যে প্রৌঢ় দিনশেষে কেউ না দেকে মতো একটা গোলাপ কিনে চুপি চুপি বাড়ি ফেরে সবার চোখ বাঁচিয়ে পুরনো স্ত্রীর হাতে তুলে দেয় নতুন বিশ্বাসে তার কোনো তুলনা হয় না। আমার মনে হয়, চিরদিন মনে হবে যাবতীয় সংকীর্ণতা আর দ্বন্দ্বের বাইরে এক গোলাপমুখি দিনের নাম ভ্যালেনটাইন ডে। এই একদিনে আমি আমার দয়িতার পাশাপাশি আরো অনেকজনকে ভালোবাসতে পারি। মনে মনে বলতেই পারি। আপনিও পারেন পারবেন। কারণ ভ্যালেনটাইন ডে নামেই একটি দিন আছে যে। লেখক ও কলামিস্ট
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
