প্রকাশিত: Wed, Mar 1, 2023 4:08 PM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 8:39 PM

চারিদিকে অভিজিৎ রায়কে বুঝতে চাওয়াদের জন্ম হোক

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি : অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার পর আমরা পেয়েছি কিছু মুসলিমবিদ্বেষী নাস্তিক। এরা না মুক্তচিন্তক না নাস্তিক। এরা মাঝামাঝি শঙ্কর প্রজাতির। অভিজিৎ মুসলিমবিদ্বেষী ছিলেন না, তিনি ধর্মের সমালোচনা করতেন। দুনিয়ায় ধর্ম ৪৫০০+। অভিজিৎ এগুলোর একটিতেও বিশ্বাস করতেন না। অপরদিকে খেয়াল করেন, ধর্মের সমালোচনা আর মুসলিমবিদ্বেষের মধ্যে একটা ফাইন লাইন আছে। ফাইন লাইনটা হচ্ছে, অভিজিতের স্পষ্টভাষী এবং কোমল গলায় বলা কিছু পরিষ্কার কথা, ‘আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশেপাশের বহু কাছের মানুষজন বন্ধুবান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোনো রাগ নেই, নেই কোনো ঘৃণা। তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মিরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা’। 

মানবতার প্রথম শিক্ষাই হচ্ছে, আপনি যখন সবাইকে সমানভাবে দেখতে শিখবেন। কিন্তু তথাকথিত প্রগতিশীল নামের কিছু ভন্ড নিজেদের প্রগতিশীলতার অথরিটি ভাবে। অথচ প্রগতিশীল হওয়া মানে যেকোনো অথরিটিরই বিরুদ্ধে থাকা। রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল শান্তিনিকেতনের না, সবার। অভিজিৎ রায়ও মুক্তমনা ব্লগের না, সবার। তথাকথিত প্রগতিশীলদের সঙ্গে সহীহ মুসলিম ভেবে অন্যকে খারিজ করে দেওয়াদের মধ্যে পার্থক্য নাই। এরা মুক্তচিন্তক দূরে থাক, চিন্তকই না। বরং প্রগতিশীল প্ল্যাকার্ডধারী একদল ইডিয়টকে মুক্তচিন্তার অথরিটি বানাতে দিলে এরা হয়ে উঠবে নাস্তিক মোল্লা।

ফলে অভিজিৎ হয়ে উঠবেন মোল্লাদের পীর। এতে অভিজিৎ রায়ের স্মৃতিরক্ষা হতে পারে, কিন্তু মুক্তচিন্তা রক্ষা পাবে না। চারিদিকে অভিজিৎ রায়কে বুঝতে চাওয়াদের জন্ম হোক, তারা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিয়ায় বসে লিখুক অভিজিতের ত্যাগের কথা, দর্শনের কথা। সেই দর্শন স্থাপিত হোক মানবিক মানুষের নিদর্শন হিসেবে। মানুষ বিভেদ মুছে সমস্বরে বলুক, ‘আমার গলা কাটতে পারো/কাটতে পারো হাত/জেনো শত কবি জন্ম নেবে/রক্তবীজের জাত’।