প্রকাশিত: Wed, Mar 1, 2023 4:11 PM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 3:20 PM

স্মার্টনেস বিপ্লবীর মৌলিক শর্ত

আহসান হাবিব : [১] গ্রাম্যতা দিয়ে আধুনিকতাকে ঠেকানো যায় না। যেমন প্রান্ত দিয়ে কেন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। একটা কোষের দুটো অংশ থাকে, একটা কেন্দ্র মানে নিউক্লিয়াস, আর একটা প্রান্ত। দুটোই দরকারী, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্র। কেননা এই কেন্দ্রেই থাকে নিয়ন্ত্রক ডিএনএ। [২] শহরে দেখবেন অনেককে গলায় গামছা, পরনে লুঙ্গি পরে হাঁটছে। তাদের ভাব এমন যে দেখ বেটা আমি কেমন প্রতিবাদী। অথচ এটা তারা জানে না, এই ভঙ্গিমা বড় গ্রাম্যতা। এই প্রতিবাদ দিয়ে শহরের চুল স্পর্শ করা সম্ভব নয়। 

[৩] ইতিহাসে আমরা দেখেছি শ্রেণিসংগ্রামের নামে অতি বাম বিপ্লবী দল শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। তারা গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করতে চেয়েছিল। ওখানে গিয়ে শ্রেণি শত্রু খতমের নামে হত্যায় মেতে উঠেছিল। পরিণাম সকলে জানে- তারা নিঃশেষ হয়ে গেছে। এই ফাঁকে শহরের শ্রমজীবীদের দলে ভিড়িয়ে বুর্জোয়া দলগুলি তাদের কাঙ্খিত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। [৪] কিছু কিছু কবিকে দেখি তারা শাহবাগফোবিয়ায় ভোগে। কথায় কথায় তারা শাহবাগকে গালিগালাজ করে। কারণ কি? কারণ আর কিছু নয়, বিকশিত- যতটুকুই হোক- শহরের কেন্দ্র শাহবাগের বিরুদ্ধে তারা পেরে ওঠে না। 

ফলে হীনমন্যতা জন্ম হয়। এই হীনমন্যতা থেকেই গালিগালাজের উৎপত্তি। এটা একটা দ্বন্দ্ব। এর মিমাংসা কি? আধুনিকতা দিয়েই আধুনিকতা ঠেকাতে হবে। জমিতে কাজ করা কৃষিশ্রমিক দিয়ে বিপ্লব করা যায় না, বড়জোর তারা সহকারী হতে পারে, কিন্তু মূল ভ্যানগার্ড কলকারখানার শ্রমিক। [৫] গ্রাম্যতা বলতে অনেকেই গ্রাম বোঝে, অভিমান করে। কিন্তু গ্রাম্যতা মানে গ্রাম নয়, এটা এক ধরণের আচরণ যা সামন্তীয় পিতৃতান্ত্রিকতা থেকে উদ্ভূত। এটা যখন ইতিহাসের বর্জ্য হয়ে পড়েছে, তখন তাকে যদি আঁকড়ে থাকা হয়, সেই ভঙ্গিমাকে গ্রাম্যতা বলে। এটা তো ঠিক শহরের আগে সবকিছু গ্রামই ছিল। 

[৬] সমাজ বিকাশের দ্বন্দ্বকে না বোঝার ফল এই লুঙ্গি গামছা শার্টের বোতাম খোলা রাখার গাড়লিপনা। একজন বিপ্লবী কখনো পশ্চাদপদ চিন্তাকে ধারণ করে না। এইজন্যই মনে হয় পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত তথাকথিত বিপ্লবীদের দ্বারা বুর্জোয়ার একটি চুলও কাটা যায়নি। কারণ এই পোশাক পাতিবুর্জোয়া লেবাস যা বরং বিপ্লবকে ঠেকিয়ে বেড়ায়। স্মার্টনেস বিপ্লবীর মৌলিক শর্ত। লেখক: ঔপন্যাসিক