প্রকাশিত: Wed, Mar 1, 2023 4:13 PM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 3:10 PM

‘দ্বিতীয় খুনের কাহিনি’, মশিউল আলম এবং লম্পট আর ভন্ডরা!

গুলজার হোসেন উজ্জ্বল : অনেকদিন পর রুদ্ধশ্বাসে একটি বই পড়ে শেষ করলাম। পড়া শেষ করে এখন গভীর বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে আছি। ভীষণ খারাপ লাগছে গল্পের চরিত্রগুলোর জন্য। বইটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি ট্র্যাজিক ঘটনা নিয়ে লেখা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে জেনারেল মঞ্জুরসহ কয়েকজন সেনা অফিসারের মৃত্যু। জেনারেল মঞ্জুর এই গল্পের প্রধান চরিত্র। একজন মেধাবী, সৎ, হৃদয়বান, মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার করুণ মত্যু আমার মনকে বিষণ্ন করে তুলেছে। যদিও এই ঘটনা আগেও বিভিন্ন বইতে পড়েছি, তবুও কথাসাহিত্যিক  মশিউল আলমের লেখার গুনে সবকিছু এত জীবন্ত হয়ে উঠেছে যে আমার মনে হচ্ছে আমি নিজেও যেন ওই ভয়ংকর সময়ের ভেতর দিয়ে গেছি। 

৭৫ থেকে ৮১। আমাদের জাতীয় জীবনের এক অস্থির সময়। পুরো আর্মিতে যেন রক্তের নেশা পেয়ে বসেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে এর শুরু। জেনারেল মঞ্জুর হত্যার ভেতর দিয়ে তার শেষ। অনেককেই বলতে শুনেছি, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশে কোথাও কোনো প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া হয়নি। কথাটা সত্য না। ৭৫ পরবর্তী প্রতিটি অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু এবং তার দুঃখজনক মৃত্যু অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। জিয়াউর রহমানের জন্যও দুঃখ হয়৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা চৌকষ সেনা অফিসারের কি করুণ পরিণতি। জিয়া আসলে তার চারপাশে এমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছিলেন যে মৃত্যু তাকে তাড়া করে ফিরছিল। মরতে তাকে হতোই, কোনো না কোনোভাবে৷ কারণ তিনি একটা লুপে ঢুকে পড়েছিলেন, যার অনেকটা তার নিজের হাতেই তৈরি।  মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৬।  

প্রায় আমারই বয়স বলা যায়। কেবল হু মু এরশাদ বিরল সৌভাগ্যবান। প্রচুর কন্সপিরেসি করে, প্রচুর খুন-খারাবির ইন্ধন দিয়ে, নয় বছর স্বৈরশাসন চালিয়েও শেষাবধি অক্ষত রয়ে গেলেন। জীবনটা উপভোগ করে গেলেন। নবতিপর জোয়ান হিসেবে স্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাদ নিলেন। এই দেশ আসলে লম্পট আর ভন্ডদের জন্য খুবই উপযুক্ত। বইটির নাম বলা হলো না। ‘দ্বিতীয় খুনের কাহিনি’। -মশিউল আলম। লেখক: চিকিৎসক