কবির য়াহমদ : গত ডিসেম্বরে বিএনপির যে সাতজন জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন একজন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ছিল নাম। রুমিন ফারহানার শূন্য আসনের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। শূন্য আসনের সে উপনির্বাচনে একমাত্র প্রার্থী জাসদ একাংশের সহসভাপতি আফরোজা হক রীনা। নিয়ম অনুযায়ী তিনিই নির্বাচিত। আফরোজা হক রীনার কিছু রাজনৈতিক অতীত আছে। ১৯৬৯ সালে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন হাসানুল হক ইনুকে। ১৯৯৮ সালে জাসদের কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো সদস্য হন আফরোজা হক। বর্তমানে তিনি দলটির সহসভাপতি ও জাতীয় নারী জোটের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক। 

তার রাজনৈতিক পরিচয় একপাশে রেখে এবার যদি অন্যপাশ আলোচনা করি। ব্রাকেটবন্দি কিংবা বহুধাবিভক্ত জাসদ বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে বড় কোনো নাম নয়। আরও কিছু দলের মতো এক দল এক নেতা জাতীয় দল। মূল নেতা হাসানুল হক ইনু নামে পরিচিত, তবে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলার মতো নয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ হয়ে তিনি নির্বাচনে জিতেছিলেন, মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এখন মন্ত্রিত্বের দায়িত্বে নেই, তবে আছেন সংসদ সদস্য হয়েই। 

হাসানুল হক ইনু ভোটের রাজনীতির বড় নেতা নন ঠিক, কিন্তু দেশের বড় নেতাই। নির্বাচন সন্নিকটে। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ হয়তো চাইছে না তার মতো বাক্যবাগীশ কোনো নেতার বিরুদ্ধপক্ষ হতে। সে কারণেই কিনা শূন্য হওয়া সংরক্ষিত মহিলা আসনটা দিয়ে দিলো হাসানুল হক ইনুর জাসদ একাংশকে। আর সে পথ ধরেই কি ইনু সংসদে নিয়ে আসলেন তার স্ত্রীকে। আচ্ছা, কেবল কি হাসানুল হক ইনুই তার স্ত্রীকে সংসদ সদস্য বানালেন? না, এমন আছে আরও। এই যেমন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কথাই ধরুন না, রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খানও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। এক দল এক নেতাদের কথা বাদ দিলাম, এবার আসি পতিত স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির দিকে। জাতীয় পার্টি একাংশের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য।

স্বামী-স্ত্রী দুজনই সংসদ সদস্য এমন আরেকজন ছিলেন। কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হয়ে সংসদ সদস্য পদ হারানো কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। পাপুল পদ হারালেও স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এখনও সদস্য হিসেবেই আছেন সংসদে। ইনু-মেনন-কাদেরদের স্ত্রীরা যোগ্য নন এমনটা বলছি না। বিধিসম্মত আনুপাতিক পদ্ধতিতে অথবা যোগাযোগপ্রভাবে প্রাপ্ত সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য পদে তারা কি দলের অন্যদের কথা ভাবতে পারতেন না? এটা অনুদার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ‘কমরেড’। দেশের জন্যে না হোক, অন্তত দলের জন্যে তো পারতেন কিছুটা উদার হতে। লেখক: সাংবাদিক