প্রকাশিত: Thu, Dec 8, 2022 6:41 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 11:13 AM

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চারটা বড় বড় ঘটনা ঘটে গেছে!

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে চারটা বড় বড় ঘটনা ঘটে গেছে। আওয়ামী লীগ ডিপ্লোম্যাটিক জোন থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পেয়ে যারপরনাই হতাশ হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুঃখজনক অতি বাড়াবাড়িতে ২০২২ সালে এসেও রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ দরকার পড়লো, অথচ সবাই জানে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। [১] বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে ১৫টি বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশন। যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা মানবাধিকার রক্ষায় ও বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রসারে গণতন্ত্রের ভূমিকা তুলে ধরেন। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে উল্লিখিত স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচনের গুরুত্বও তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে। বাংলাদেশের প্রধানতম উন্নয়ন সহযোগী জাপানকে সাথে নিয়ে পশ্চিমারা আওয়ামী লীগকে সিগন্যাল পাঠিয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। আমি আগের এক পোস্টে বলেছিলাম, এই মেসেজটা আগেও দেওয়া হয়েছিল, তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে। কূটনৈতিক ভদ্র ভাষায় যা বুঝানোর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিটা বাংলাদেশের মানুষকে আন্দোলন সংগ্রাম করে অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশের বাজারে পশ্চিমাদের তেমন বড় অর্থনৈতিক স্বার্থ নেই, উলটা পশ্চিমের সাথে বাংলাদেশের সুবিশাল বাণিজ্য গ্যাপ বাংলাদেশের অনুকূলে। ফলে এখানে সরকার পরিবর্তনে ভারত ও চীন ছাড়া কেউ ইনভেস্ট করবে না, মৌখিক সমর্থন জোগাবে শুধু। তবে হ্যাঁ, চীনকে ঠেকানোর প্রশ্নে ভবিষ্যৎ আরাকান কেন্দ্রিক ভূরাজনীতির প্রেক্ষিতে তাঁরা বাংলাদেশে নতুন করে গ্রাউন্ড তৈরি করছে।

[২] ভারতও আওয়ামী লীগকে পরিষ্কার মেসেজ দিয়েছে। ভারত আওয়ামী লীগকে ১টি বৈধ এবং ২টি অবৈধ বলপ্রয়োগের নির্বাচনে একচেটিয়া সমর্থন দিয়েছে। চতুর্থটিতে ভারত সমর্থন না দেওয়ার মেসেজ দিয়েছে। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা আগামী নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকবে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা কূটনৈতিক ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে একসঙ্গে হাঁটতে প্রস্তুত ভারত। সম্ভবত ওবায়দুল কাদের ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে দেখা করে শীতল বার্তা পান। বাংলাদেশের মানুষ বিগত দেড় দশকের ভারতীয় সিদ্ধান্তে ত্যাক্তবিরক্ত, তাঁরা বাংলাদেশে তাদের স্টেইককে আর বেশি ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না। বিষয়টি দেশে ও দেশের বাইরে ভারতীয় পেশাদার কূটনৈতিকরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে স্পষ্ট করেছেন আগেই। 

[৩] গতকাল বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। মঙ্গলবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পুলিশের হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তার এই বক্তব্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। 

[৪] আল জাজিরা ইনভেস্টিগেশনের বরাতে প্রথমবারের মতো জানা গেল যে, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের হাতেও র‌্যাব-পুলিশের উপর নিষেধাজ্ঞার এলিমেন্ট রয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাজ্য জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের জড়িত থাকার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই প্রমাণ পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের লবিং এর কারণে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ‘ডেথ স্কোয়াড’কে নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন আটকিয়ে দিয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা যেকোনো মুহুর্তে সচল হয়ে যেতে পারে।

 ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্যাতক কর্মকর্তাদের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ডোসিয়ার তৈরির জন্য সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের কাছ থেকে তথ্য ভেরিফিকেশান ফিডব্যাক নিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের শীর্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান শেখ হাসিনার সফর বাতিল করেছে। চীন ছাড়া শেখ  হাসিনার সমর্থনে এখন আর কেউ নাই। স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার প্রধানতম উৎস অর্থাৎ বিদেশি সমর্থনের লাগামগুলো একেবারেই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এখান থেকে বাংলাদেশের মানুষকে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে পেছনে ফিরে দেখার অবকাশ নেই। দুর্বৃত্ত সরকারকে হটিয়ে, নিয়মতান্ত্রিক দেশ গড়ার যাত্রার শুরুটা বাংলাদেশের মানুষকেই করতে হবে, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস থেকেই কাজটা শুরু হোক। ফেসবুক থেকে