প্রকাশিত: Thu, Dec 8, 2022 6:50 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 11:14 AM

বিএনপির ‘নথ খসানো’ এবং আওয়ামী লীগের ‘খেলা’

হাসান শান্তনু: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১০ ডিসেম্বরের নয়াপল্টনের সমাবেশে যোগ দিতে পারেন, জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সরকারের শীর্ষপর্যায়কে এমন বার্তা দেন কয়েকদিন আগে। সরকার, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা ওই তথ্য জেনে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে শুরু থেকেই কঠোর ছিলেন। অবশ্য খালেদা জিয়া সমাবেশে উপস্থিত থাকতে পারেন, এমন কথা গণমাধ্যমের কাছে বিএনপির প্রথম সারির কোনো নেতা শুধু সরাসরি নয়, ইনিয়ে-বিনিয়েও বলেননি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে ‘সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত’ দলটির কথিত অতি বিপ্লবী কয়েক নেতার। নয়াপল্টনের সমাবেশ ঠেকিয়ে খেলা হবে, একজন কর্মী দিয়ে হলেও সেখানে সমাবেশ হবে- দুইদলের এমন অবস্থানের মধ্যে গণতন্ত্রের ধারাবাহিতা রক্ষায় বুধবার পুলিশ নয়াপল্টনে সাংঘাতিক ভূমিকা পালন করলো। এতে গণতান্ত্রিক বিশ্বে দেশের মর্যাদা যখন বাড়ছিল, ঠিক তখনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাণী এলো- নয়াপল্টনের বদলে বিকল্প জায়গায় দলটি সমাবেশ করতে আগ্রহী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তাব, অনুমতি পুলিশ আগেই দিয়েছিল। বিএনপি নথ তো খসালোই, লোক হাসানোর দরকার কী ছিল?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সরকারের সব্যসাচী মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আজকাল বিবৃতি-বক্তব্য শুরু করেন খেলা হবে শ্লোগানে। এটা রাজনৈতিক শ্লোগান হতে পারে না বলে মত দেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ। এরপরও কাদের  আংশিক প্রমিত, আংশিক নোয়াখালীর স্থানীয় উচ্চারণে এ রেকর্ড বাজাচ্ছেন। বুধবার সরকার পুলিশ দিয়ে খেলাটা খেলেছে। বিএনপির মধ্যমসারির কয়েক নেতার ফাঁদে প্রশাসন পা দিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশ আটকাচ্ছে। ওখানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিলে গণতন্ত্রের নস্যাৎ হওয়া পরের কথা, এর গায়ে সামান্য আঁচড়ও লাগতো না। আর বিএনপিরই বা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতেই হবে কেন? একপক্ষের গণতন্ত্রের ধারাবাহিতা রক্ষা, বা অন্যপক্ষের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জাতীয় আন্দোলনে দেশের আমজনতার অবস্থা কী হতে পারে, তারা কী ভাবছেন, ছাপোষা নাগরিকদের মতামত কী- এ বিষয়ে কোনো পক্ষ কী ভাবছে- তা বলা মুশকিল। তবে নিষ্কলুষ বিনোদনের দুটি কৌতুক শোনা যেতে পারে। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে আন্দোলনরত এক নেতাকে সাংবাদিকের প্রশ্ন- আপনি কেন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন? নেতার উত্তর- সরকারি লোকেরা আমোদ-প্রমোদে মত্ত, দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। আবার সাংবাদিকের প্রশ্ন- আপনি এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আন্দোলন করছেন? নেতা গলা নামিয়ে বলেন- পাগল নাকি। আমার কি আমোদ-প্রমোদ করতে শখ হয় না? সরকারি দলের রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে ফেরার পথে একটি গ্রামে গাড়ির সবাই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের মধ্যে একটি এলাকার  উন্নয়নের রূপকার দুইনেতাও ছিলেন। গ্রামবাসী গাড়ির সব যাত্রীকে মৃত ভেবে কবর দিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পুলিশকর্তা গ্রামের সবচেয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে জানতে চান, দুর্ঘটনায় গাড়ির সব যাত্রীই যে মারা গেছেন, এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত হলেন কীভাবে?’ ওই ব্যক্তির জবাব, আহতদের মধ্যে দুজন বলছিলেন যে, তারা জীবিত। আমরা জানলাম, তারা রাজনীতিবিদ, তাই তাদের কথা বিশ্বাস করিনি। সবাইকে কবর দিয়ে দিয়েছি। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে