কবির য়াহমদ : চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি যে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ করেছিলেন তার বিরুদ্ধে আগেও কোটি টাকার ঘুষের অভিযোগ এনেছিলেন একজন সংসদ সদস্য। নড়াইলের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি ২০১৩ সালে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘুষ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। মোল্যা নজরুল ইসলাম নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা তখন ছিলেন ডিবি উত্তরের সহ-কমিশনার। অভিযোগের পর তাকে সেখান থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

এরপর দুদক তদন্ত করে। ঘুষের প্রমাণ পায়, এবং রহস্যজনক কারণে মোল্যা নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে পুলিশের দুই উপপরিদর্শককে আসামি করে। মোল্যা নজরুলকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দিলেও দুদক পুলিশ সদর দপ্তরকে বিভাগীয় নেওয়ার সুপারিশ করে। আমাদের বিশ্বাস করাতে চেষ্টা হয় নিম্নপদস্থ দুই পুলিশ কর্মকর্তা এক কোটি টাকা ঘুষের লেনদেনে জড়িত ছিলেন! 

সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি নিজস্ব প্যাডে মোল্যা নজরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে, চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন আইজিপিকেও। কিছুই হয়নি মোল্যা নজরুলের। উপরন্তু সময়ের ব্যবধানে পদোন্নতি পেয়ে এখন তিনি গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার। মাহিয়া মাহি সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন, যার বিরুদ্ধে এইধরনের অভিযোগ নতুন নয়। তবু একজন পরিচিতজনের অভিযোগের পরেও পুলিশ সদর দপ্তর তদন্তের ব্যবস্থা করেনি। তা না করে পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে মাহিয়া মাহির বিরুদ্ধে। এবং অতি-দ্রুততায় গ্রেপ্তার করেছে মাহিয়া মাহিকে। 

মাহি যদিও জামিন পেয়েছেন, তবে এই মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পুলিশের পেশাদারত্ব। প্রশ্ন উঠেছেÑ তবে কি পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না? পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই কি বিনাপ্রশ্নে-বিনাতদন্তে গ্রেপ্তার? পুলিশ কি একটা অভিযোগেই এভাবে সংক্ষুব্ধ হতে পারে?

মাহিয়া মাহি জানিয়েছেন, তিনি পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি, অভিযোগ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি, এখানে ব্যক্তির অপরাধ কিংবা ব্যক্তির প্রতি অভিযোগকে পুলিশ প্রশাসন সামষ্টিকভাবে নিয়েছে। এটা দরকার ছিল না। একজনের কারণে পুলিশ বিতর্কিত হতে পারে না। একজনের কারণে পুলিশ বাহিনী নিজেদের এমন প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে না। লেখক: সাংবাদিক