ফজলুল বারী : অমর ভাস্কর্য শিল্পী শামীম শিকদারের মৃত্যুর পর তিনি কার বউ এসবও পরিচয়ে আসছে। কিন্তু তিনি যে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদারেরও বোন, এই পরিচয়টা সবাই সতর্ক এড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রকৌশলী সিরাজ শিকদার তাঁর মতো করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। আজকের যে বাংলাদেশের পতাকা এটি তিনি ১৯৬৮ সালে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের সম্মেলনে ঝালকাঠি শহরে প্রথম উড়ান। ইতিহাসে সে কথাটি লেখা নেই। আমাকে যেটি বলেন ঝালকাঠির সাংবাদিকরা। সিরাজ শিকদার মুক্তিযুদ্ধ করেন ঝালকাঠির পেয়ারা বাগান এলাকায়। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি প্রথম ক্রসফায়ার নামের বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রাণ হারান। আমেরিকা বাংলাদেশের এই ক্রসফায়ার নিয়ে কথা বলেনা। কারণ সিরাজ শিকদার মার্কিন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। 

তিনি বাংলাদেশের চলমান ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী ছিলেন না। আমার বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় আমি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে সিরাজ শিকদার, শামীম শিকদারদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। তাদের বাড়ির বাইরে রাখা রাজহাঁসের ভাস্কর্য দেখে চেনা গেছে এটি শামীম শিকদারের বাড়ি। মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন শামীম শিকদার। তসলিমা নাসরিনের কল্লা নিতে যখন মোল্লারা সোচ্চার, দেশের কবি লেখকরা চুপ, তখন শামীম শিকদার তাঁকে শুধু আশ্রয় দেননি, তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ফ্ল্যাট বাড়ির সামনে অনেকগুলো ভাস্কর্য রেখেছিলেন শামীম শিকদার। মৌলবাদী হামলা থেকে সেগুলো রক্ষার সংগ্রামও তাঁকে করে যেতে হয়েছে। ভালো থাকবেন শামীম শিকদার।

 লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে