প্রকাশিত: Wed, Mar 29, 2023 9:52 AM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 12:23 AM

রুচির দুর্ভিক্ষ আচমকা আকাশ থেকে পড়ে না

তসলিমা নাসরিন: রুচির দুর্ভিক্ষ আচমকা আকাশ থেকে পড়ে না। প্রথমে খরায় বা বন্যায় রুচির উৎপাদন নষ্ট হয়। তারপর শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। খরা এবং বন্যা মূলত তৈরি করে তারাই, যারা রুচির চাষ করে। তাদের তখন যথেষ্ট সময় নেই রুচি উৎপাদনের জমিকে উর্বর রাখার, তারা ব্যক্তিগত গোলার ফসল নিয়েই বা সাফল্য  নিয়েই তখন তৃপ্ত। 

রুচিকৃষকদের যখন মূল্যবোধের অবক্ষয় শুরু হয়, তখনই রুচির পতন শুরু হয় আর তখনই অরুচির উত্থান শুরু হয়। রুচির পতন আজ থেকে হচ্ছে না, অন্তত তিরিশ বছর ধরে তো হবেই। শহর, নগর, বন্দর আর গ্রাম-গঞ্জের যাত্রা পালা,  কবিগান বাউলগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, পাড়ার মহল্লার রবীন্দ্র নজরুল সুকান্তের জন্ম জয়ন্তী পালন,  ফি সপ্তাহে নাচ  গান আবৃত্তি আর নাটকের অনুষ্ঠানÑ সবকিছুকে   বিদেয় করে যখন  সামিয়ানা টাঙিয়ে কোরান তেলোয়াত, মিলাদ আর ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন শুরু হয়ে গেলো দেশজুড়ে, তখন রুচিকৃষকেরা মুখ বুজে ছিলেন, ঊর্বর জমি নীরবে পাচার করেছেন অরুচির ব্যবসায়ীদের কাছে। যে রুচিবান শিল্পীরা মশাল হাতে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মশাল এক এক করে অরুচির ব্যবসায়ীরা নিভিয়ে দিয়েছে, তাদের খুন হয়ে যেতে দেখেছেন রুচি কৃষকেরা, তাদের নির্বাসন দণ্ড দেখেছেন। তারপরও নিজেদের ক্ষুদ্র সাফল্যে আত্মমগ্ন থেকেছেন। 

আজ অরুচি আর  মিথ্যেয় ঠাসা সমাজে নোংরা  নষ্ট ওয়াজিরা, যেকোনো শিল্পী-সাহিত্যিকের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অরুচি উৎপাদক হিরো আলম জনপ্রিয়। এর দায়ভার অবশ্যই রুচিকৃষকদের। আসলে রুচি আর অরুচি চিরকালই পাশাপাশি বাস করেছে। রুচিকে ছাপিয়ে অরুচি যখন সর্বত্র বিরাজ করে তখনই  কিছু লোক  নড়ে চড়ে বসে। অরুচি তখনই সর্বত্র বিরাজ করে, যখন তাকে সর্বত্র বিরাজ করতে দেওয়া হয়। রুচির পোশাকও গ্রাস করে নিয়েছে অরুচি। শাড়ির ওপর আটের দশকে মেয়েদের চাদর চাপাতে বাধ্য করা হয়েছিল,  একে মেনে নিলো সমাজ, শাড়ির ওপর  এর পর হিজাব চাপানো হলো, এরপর বোরখা চাপানো হলো, এরপর নিকাব চাপানো হলো, এই পদ্ধতিতে শাড়ি হারিয়ে গেলো, প্রকট হয়ে উঠলো নারীবিরোধী অপসংস্কৃতি। মুখ বুজে থাকাই রুচিকে অরুচির কাছে সমর্পণ করে। ফেসবুক থেকে