প্রকাশিত: Sat, Apr 1, 2023 1:59 PM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 6:09 PM

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মতপ্রকাশ’ এখানে আলোচ্য

শাকিল আহমেদ : নাগরিক হিসেবে কিছু বিষয়ে ‘মতপ্রকাশ’ করলেই কেন গ্রেপ্তার করা যাবে, কেন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যাবে না, সেটা আরেকটা বড় প্রশ্ন। সব আমি বুঝি এমন না। যতোটুকু বুঝি, ততোটুকু বলি। আরও বলি সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মতপ্রকাশ’ এখানে আলোচ্য। সোশ্যাল মিডিয়া এমন এক অলগারিদম তৈরি করেছে যেখানে একজন ব্যক্তি তার মতপ্রকাশ করেন। সেটি তীব্র গালি হতে পারে। কিংবা সুবচন। তারপর সেটি যারা পছন্দ করেন গ্রহণ করেন তারা এটি লাইক দেন। তারপর সেই লাইকের পছন্দের বলয় তৈরি হয়ে যায়। কারণ মানুষ নিজে যা গ্রহণ করে তারি সমগামী হন। যে কারণে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে যদি কোনো উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মুসলমান ধর্মবিদ্বেষ ছড়ায় সে মতের অনুসারী শত সহস্র তাতে লাইক দিতে পারেন এবং সত্য মিথ্যায় পরিণত হয়, মিথ্যা সত্যে। আর এই দায়হীন তথ্যপ্রবাহে ব্যক্তি মানুষের ‘পছন্দের’ চাহিদা বেঁচে পয়সা কামায় সোশ্যাল মিডিয়া। আদর্শিক সাংবাদিকতা একটা প্রসেস। 

যেখানে তথ্যপ্রবাহ দায়িত্বশীল এবং নিয়ন্ত্রিত। একজন সাংবাদিক নিজে কোনো মত দিতে পারেন না। তিনি পক্ষ-বিপক্ষ প্রতিপক্ষ কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্লেষক সকলের মত পাশাপাশি এনে সত্য তুলে আনার চেষ্টা করেন। হু-সত্য প্রতিষ্ঠা সাংবাদিকতার মৌলিক লক্ষ্য। কেবল নিরপেক্ষ তথ্যসমূহ তুলে ধরা নয়। পছন্দ-অপছন্দের ধার ধারে না সাংবাদিক। সেজন্য কেবল ব্যাক্তি সাংবাদিকও কিছু লিখলে তা সংবাদ হবে না। যতোক্ষণ একাধিক হাত ঘুরে সম্পাদীয় টেবিল হয়ে সেটি প্রকাশিত হবে। এজন্য সবশেষ মিডিয়া তাত্ত্বিকরা বলছেন। সিটিজেন জার্নালিস্টের কনটেন্টও সংবাদ নয় যতোক্ষণ সম্পাদীয় প্রতিষ্ঠান ঘুরে সেটি প্রকাশিত হচ্ছে। 

কথা সংক্ষেপ করি। ওই যেকোনো ব্যক্তি নাগরিক যদি অন্যের অধিকার খর্ব করে মত দেন। যদি জাতি ধর্ম বিদ্বেষ ছড়ান। এমনকি প্রকাণ্ড গালি দেন। মার্কিন আইনে সেটি ততোক্ষণ অপরাধ নয় যতক্ষণ শারীরিক হামলার হুমকি বা শিশুর প্রতি যৌন বা সহিংস মত দেওয়া হয়। কিন্তু একই অপরাধে বৃটেনে গ্রেফতার করা যাবে, বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট তো জানাই আছে। আমেরিকায় সমাজব্যবস্থার স্তর এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে কারণে মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছেন। কিন্তু আমাদের এখানে তো যেকোনো এক বালকের ধর্মীয় পোস্টের ফলাফলে ঘটনার ধারে কাছে নেই এমন নিরীহ পাড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের দেড়-বছর আগে থেকে পরিকল্পনা করে জাতিবিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছিলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। সে কারণে কয়েক হাজার (সম্ভবত ১১ হাজার।) মানুষ মেরে ফেলার পরও স্থানীয় অন্য নাগরিকদের খুব একটা গায়ে লাগেনি ভয়ংকর সে সন্ত্রাস কারণ সোশ্যাল মিডিয়া সত্যকে মিথ্যা-মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার দারুণ এক মেশিন। 

আর সে কারণেই ক্রমাগত মিথ্যা বলেও ইলিয়াস সেফুদের শত সহস্র ফলোয়ার। তারা বিশ্বাস করে শান্তি পান প্ল্যাটফর্ম তা বেঁচে। এখন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কি ধোঁয়া তুলসি পাতা? অনেকেই না। এখানে ওয়নার্স মিডিয়ায় বহু রকম খেলা, হরেক রকম রাজনীতি। সেই আলাপ আরেকদিন। কিন্তু সংকটের গোড়াটা হচ্ছে ‘সাংবাদিকতার এথিকস’ যা মেনে চললে তাকে সাংবাদিকতা বলা যাবে, যেটি সব মিডিয়ার জন্য সর্বসম্মত আচরণবিধি ন্যাশনাল জার্নালিজম কোড অব কনডাক্ট আমাদের নেই। প্রেস কাউন্সিল এ্যাক্ট কেবল প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য এবং যে আচরণবিধির উপর দাঁড়ানো সেটি দুর্বল অসম্পূর্ণ। টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য কোড অব এথিকস খসড়া হয়েছিল। গৃহীত অনুমোদিত হয়নি। বলছিলাম, গ্রেফতার করা যাবে কিনা সাংবাদিককে? মনে হতে পারে গোষ্ঠিস্বার্থ দেখছি, কিন্তু যে ন্যূনতম সম্পাদীয় নীতি মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো হাঁটতে শুরু করেছে। যারা তথ্য প্রবাহের গ্রাফের চূড়ায় আছেন সত্য জানানো যাদের পেশা তাদের বেড়ে উঠার পথটা খানিকটা খোলা থাকুক না। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে