প্রকাশিত: Sat, Apr 1, 2023 2:02 PM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 5:32 PM

প্রথম আলোর ওপর এতো ‘বিলা’ কেন!

সাঈদ তারেক : প্রথম আলোকে নিয়ে সরকারের সমস্যাটা কোথায় আমার ঠিক বুঝে আসে না। ঘরানা তো একই। একই নীতি, একই আদর্শ, আখেরে লক্ষ্যও একটাই। এই পত্রিকাটি চালায় মূলত সিপিবি বা মস্কোপন্থী রাজনীতিক কাম বুদ্ধিজীবীরা। আর কে না জানে, সিপিবি হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের কৌশলগত পার্টনার। কেন? বুঝতে আগে সিপিবি কী, এটা বুঝতে হবে। সিপিবি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা। নামটাও দেখবেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। অন্যান্য দলের নাম ‘বাংলাদেশ’ বা ‘জাতীয়’ দিয়ে শুরু হলেও এ দল তাদের নামের মধ্যেই একটা আন্তর্জাতিকতা ধরে রেখেছে। মূল দল রাশিয়ায়। সোভিয়েত আমলের কমিউনিস্ট পার্টি দেশে দেশে বিপ্লব ঘটাঁনোর জন্য শাখা গড়ে তুলেছিলো। ভারতে এই দলের শাখা ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ বা সিপিআই। পাকিস্তান আমলে এ দেশে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিলো। স্বাধীনতার পর উন্মুক্ত হয়ে নামকরণ হয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থন দিয়েছে, সিপিআই এই সমর্থন আদায়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলো, এবং ভারতে তারা ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সঙ্গে মিত্রতাপাশে আবদ্ধ ছিলো, সেই তত্ত্বমতে সিপিবিও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দেয়। প্রথমদিকে কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি থাকলেও অল্প সময়েই তা কেটে যায়। গঠিত হয় ত্রি-দলীয় ঐক্যজোট। শেষমেষ বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে বাকশাল করিয়ে এদেশে সোভিয়েতরাজ কায়েমের পথে অনেকটা এগিয়ে যায়।

৭৫ পরবর্তীকালে কিছুদিন অসুবিধার মধ্যে থাকলেও জিয়াউর রহমানের আমলে মোটামুটি ভালো হালেই কাটায়। সে সময় তারা জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসূচি সমর্থন করে কিছুদিন ঝাকা-কোদাল নিয়ে দৌড়ঝাপও করেছে। এরপর এরশাদ আমলে পলিসি বদলে দলের বেশকিছু নেতাকে আওয়ামী লীগে ঢুকিয়ে দেয়। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন সংগ্রাম করলেও পরের সব সরকারের আমলেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’, কিছুটা গা বাঁচানোর নীতি। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সার্বিক সমর্থন জোগায়। সেই থেকে সরাসরি সরকারে না গিয়ে কৌশলগত পার্টনার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিছুটা রাজনৈতিকভাবে, বাকিটা পত্রিকা বা মিডিয়ার মাধ্যমে। ট্রান্সকমের লতিফুর রহমান ছাত্রজীবনে কিছুদিন ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলা এবং ইংরেজি, দু’টো পত্রিকা ফাইন্যান্স করানো হয় তাকে দিয়ে। একদল নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী তাদের মেধা এবং বিচক্ষণতা দিয়ে পত্রিকা দু’টিকে দাঁড় করাতে সক্ষম হন। সিপিবির শেকড় যেহেতু রাশিয়ায়, ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক এবং উভয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের নিরিখে তাদের পলিসি নির্ধারিত হয়। উভয় দেশই যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করছে সিপিবিকেও তাই করতে হবে। তবে রাজনৈতিক দল বিধায় বা ‘স্বৈরাচারের সহযোগী’ তিলকটা যাতে না লাগে সেজন্য কৌশলগুলো একটু ভিন্ন। 

গত কয়েক বছর তাদের বিভিন্ন কার্যাবলী লক্ষ্য করলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। সিপিবি সরকারের সমালোচনা করে, কিন্তু সরকার থেকে আওয়ামী লীগের বিদায় চায় না। সুশাসন চায়, গণতন্ত্র চায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে দিয়ে। আন্দোলন করে কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জোটে যায় না। এই দলটির রাজনীতি প্রধানত সরকারের সংশোধন, বিদায় নয়। প্রথম আলো স্টার তাই করছে। তারা সরকারের সমালোচনা করে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সরকারকে সতর্ক করতে সংশোধন হতে, সরকার ফেলে দিতে বা আওয়ামী লীগ বিরোধী কাউকে ক্ষমতায় আনতে না। কিন্তু মাথা মোটাগুলো এই সুক্ষ কৌশলটা বুঝতে পারে না। 

ধরা যাক, বিরোধী দল আন্দোলন সংগ্রাম তুঙ্গে নিয়ে গেলো, প্রথম আলোও কি একাত্তর, সময়, ডিবিসির সুরে অতীতের মতো তাকে সন্ত্রাস-সহিংসতা অগ্নি সন্ত্রাস বলে প্রচারণা চালাবে না। সারা দুনিয়াকে দেখাবে না বিরোধী দল আন্দোলনের নামে মানুষ খুন, জ্বালাওপোড়াও করছে। এমন অবস্থায় সরকার যদি ‘২০১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করাতে চায়, তারা কি জাস্টিফিকেশনে এ্যান্তার কলাম নিবন্ধ ফাঁদবেন না? আন্দোলন বা নির্বাচনের মাধ্যমে যদি আওয়ামী লীগের চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, আওয়ামী লীগের পক্ষেই অবস্থান নেবে না। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ না বিএনপি, এ প্রশ্নে কি কখনও বিএনপির পক্ষে থাকবে। নিশ্চিতভাবেই না। তাহলে প্রথম আলোকে শত্রু ভাবতে হবে কেন? কেন বুঝবেন না আখেরে এরাই পাশে থাকবে। প্রথম আলোকে সাধারণ মানুষ এভাবেই দেখে থাকে। বিগত দিনে পত্রিকাটির অস্বচ্ছ বা উদ্দেশ্যমূলক ভূমিকাই এমন ধারণার কারণ। কিন্তু সরকার কেন এদের ভুল বুঝবে। ফেসবুক থেকে