প্রকাশিত: Thu, Apr 13, 2023 1:46 PM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 2:32 AM

চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, আমাদের বৈশাখী র‌্যালির সেই গল্পটা

লুৎফর রহমান রিটন : সাল ১৯৯০। আমরা তখন বিশ্বাহিত্য কেন্দ্রে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জেনারেল। আমাদের দিবারাত্রির সিংহভাগ সময় কাটে বাংলা মোটরে। কাজের ফাঁকে আমরা আড্ডা দিই কেন্দ্রের আম্রকুঞ্জতলে কিংবা উদার অমিয় ছাদে। কেন্দ্রে টুলু, মাযহার আর আমি থাকি সার্বক্ষণিক, সায়ীদ স্যারের কেন্দ্রীয় জেনারেল-সাহাবা কিংবা চ্যালা হিসেবে। অতিথি সাহাবা হিসেবে প্রায় নিয়মিত হাজির থাকেন খায়রুল আলম সবুজ, লিলি ইসলাম, চয়ন ইসলাম, শাহ আলম সারওয়ার, মিজারুল কায়েস, শিরীন বকুল, হাবিব আহসানসহ আরও অনেকেই। কেন্দ্রে আড্ডার বাইরে আমরা দলবেঁধে বেড়াতে যাই। চৈনিক রেস্টুরেন্টে খেতে যাই। নানান রকম পাগলামি করি।

 

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পহেলা বৈশাখে আমরা দলবেঁধে রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানেও যাই। চারুকলার বর্ণাঢ্য র‌্যালি বা শোভাযাত্রায় শামিল হই। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে একবার কিছুটা পাগলামিতে পেয়ে বসলো। সিদ্ধান্ত হলো আমরা সবাই একই সাজ-পোশাকে র‌্যালিতে অংশ নেবো। আমাদের সম্মিলিত উস্কানিতে বিপুল উৎসাহে চয়ন ইসলাম দায়িত্ব নিলেন পোশাক সরবরাহের। চয়নের গার্মেন্টসে গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবিতে লাল তাপ্পি মারা বিশেষ ডিজাইনের পাঞ্জাবি আর এবং গেরুয়া+কালো রঙের টুপি বানানো হলো। পহেলা বৈশাখ সকালে আমরা সকলে হাজির হলাম বাংলা মোটরে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। তারপর নিজেরদের পোশাক পাল্টে বৈশাখের বিশেষ পোশাকে সজ্জিত হয়ে নেমে পড়লাম রাস্তায়। গেরুয়া বসনে সজ্জিত হয়ে কেন্দ্রের একদল তরুণকে (ওদেরও গেরুয়া পোশাক) সঙ্গে নিয়ে আমরা মিছিল করে চলে গেলাম রমনার বটমূলে। সেখান থেকে শাহবাগের চারুকলায়। চারুকলার বর্ণাঢ্য ‘আনন্দ শোভাযাত্রার (মুখোশ র‌্যালির) পেছন পেছন অনেকক্ষণ ঘুরলাম। এক পর্যায়ে শাহবাগ মোড়ের কাছে আমাদের দলে এসে ভিড়লেন বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত  চৌধুরী। আমাদের সবাইকে একই রকম পোশাকে একসঙ্গে পেয়ে অভিভূত শাহাদাত ভাই চারুকলার আনন্দ শোভাযাত্রার ঢাকের অপরূপ রিদমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপূর্ব একটা নৃত্য পরিবেশন করলেন। শাহাদাত ভাইয়ের সঙ্গে আমরাও নাচলাম প্রাণ ভরে। আহারে বৈশাখ, পহেলা বৈশাখ।


সে বছর ১৯৯০ সালে, চারুকলার শোভাযাত্রাটির নামকরণ করা হয়েছিলো ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। আগে যেটা পরিচিত ছিলো ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। পরবর্তীতে চারুকলার বর্ণাঢ্য এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটি ইউনেস্কোর বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনো কোনো হনুমান এই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতায় জান কোরবান। জয় হোক বাংলা ও বাঙালির। শুভ হোক বাংলা ১৪৩০। ২৯ চৈত্র ১৪২৯। লেখক: ছড়াকার