
প্রকাশিত: Fri, Dec 9, 2022 10:20 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 10:44 AM
গণতন্ত্র প্রয়োগের সর্বোচ্চ সুযোগ পেলে এদেশের সিংহভাগ মানুষ রাজাকার সাঈদীকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে চাইবে
রহমান বর্ণিল: যে গণতন্ত্র ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতকে প্রায় আড়াইশো আসন পাইয়ে দিয়েছিল, সেই একই গণতন্ত্র ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকেই দিয়েছিল প্রায় আড়াইশো আসন। আগের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের বেশির ভাগ প্রার্থীর পরেরবার জামানত পর্যন্ত রক্ষা হয়নি। আমি গণতন্ত্রবাদী একজন মানুষ, কিন্তু বাঙালির গণতন্ত্রে আমার ন্যূনতম বিশ্বাস নেই। কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীর বিষয়ে গণতান্ত্রিক জরিপ করলে এই মুহূর্তে আশি শতাংশ বাঙালি তার মুক্তির পক্ষে মত দিবে। সুতরাং আজকাল যে প্রগতিশীলরা দেশে গণতন্ত্র নাই বলে মাঠঘাট সরগরম করছেন, তারাও জেনে রাখুন গণতন্ত্র প্রয়োগের সর্বোচ্চ সুযোগ পেলে এদেশের সিংহভাগ মানুষ শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া নয়, রাজাকার সাঈদীকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে চাইবে।
এরিস্টটলের গণতন্ত্রকে আমি বলি তাবদ বিশ্বের রাজনীতিক সমস্যা সমাধানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মতবাদ। কিন্তু এই মতবাদটিরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পৃথিবীর শিক্ষিত ও প্রগতিশীল জাতিসমূহের জন্য গণতন্ত্র চমৎকার একটি রাজনীতিক মতবাদ হলেও অশিক্ষিত ও প্রতিক্রিয়াশীল জাতিসমূহের জন্য এটা সীমাহীন এক অভিশাপের নাম। অন্ধের হাতের মশালে যেমন রাস্তা আলোকিত করার চেয়ে ঘরের চালে আগুন ধরিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি অশিক্ষিত জাতিসমুহের হাতে থাকলে গণতন্ত্রেও জাতির মুক্তি অপেক্ষা দুর্গতি বয়ে আনার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই মশাল দেয়ার আগে মশালধারীর চোখের চিকিৎসা আর গণতন্ত্র দেয়ার আগে জাতিকে তার প্রয়োগের শিক্ষা দেয়া উচিত।
আপনি আমাকে ভৎসনাপূর্বক প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কীভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে অগ্রাহ্য করছি। গবাদিপশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে লাভ নেই, যদি গরিষ্ঠের বিচারবুদ্ধি না থাকে। আপনাকে তাই ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে চাইÑ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ওপর আস্থা রাখলে পৃথিবীতে এখনো সতীদাহপ্রথা টিকে থাকতো। এখনো বিধবা নারী অচ্ছুত বলে গন্য হতো। কারণ এসব রদ করতে গিয়ে ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রোষানলে পড়োছিল রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগররা। সংখ্যাগরিষ্ঠ চেয়েছিল এইসব প্রথা টিকে থাকুক। সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে প্রাধান্য দিলে আজো এইসব বর্বরতার মধ্যে বসবাস করতে হতো আমাদের। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে প্রাধান্য দিলে মানুষ এখনো বিশ্বাস করতো সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। বিজ্ঞানের প্রথম শহিদ ব্রুনো, জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও; যাদের আজ আমরা মানব সভ্যতার পথপ্রদর্শক মনে করি, শাসকগোষ্ঠীর হাতে তারা জীবন দিয়েছিল তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নেয়নি। সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত বা গণতন্ত্র সবসময় জাতির মুক্তি বয়ে আনে না। বিশেষ করে আমাদের মতো জ্ঞানান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল জাতির জন্য গণতন্ত্র রীতিমতো গলার কাঁটা। যারা সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে রাষ্ট্রদ্রোহী জামাতকেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।
আপনি নিজেকে যতই প্রগতিশীল দাবি করুন না কেন, আপনার কোনো একটি ধারণা যদি বিএনপি-জামায়াতের সাথে মিলে যায়, আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার প্রগতিশীলতায় ঘাপলা আছে। আর চরম প্রতিক্রিয়াশীল বিএনপি-জামায়াতের ওপর আমার এই মন্তব্যের ব্যাখ্যাও যদি আপনাকে দিতে হয়, তাহলে আপনাকে প্রগতিশীল বলতেও আমার আপত্তি আছে। যে গণতন্ত্রের পিঠে সাওয়ার হয়ে বিএনপি জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আপনার আমার গর্দান বরাবর চাপাতি চালিয়ে দিবে, সেই গণতন্ত্র আমি চাই না। সমাজের নিরানব্বই শতাংশ মানুষ প্রগতিশীল মতবাদের বিপক্ষে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রয়োগ করলে এইসব প্রগতিশীলতা চর্চার অপরাধে সমানসংখ্যক মানুষ আমার বিচার চাইবে। সুতরাং যে গণতন্ত্র আমাকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে, সেই গণতন্ত্র আমি চাই না।
আঠারো বছরের নিচের ছেলেমেয়েদের সিদ্ধান্ত পরিবার বা রাষ্ট্র গ্রহণ করে না। কারণ দুটি সংগঠনই বিশ্বাস করে নিজের ভালোমন্দের সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো মানসিক সক্ষমতা তাদের হয়নি। বাংলাদেশে দুই কোটির ওপর সত্তরোর্ধ মানুষ আছে। কিন্তু দেশে আশি শতাংশ মানুষের মানসিক বয়স আঠারোর নিচে। শতভাগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে এদেশে আশি শতাংশ মানুষই চরম প্রতিক্রিয়াশীল দলের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবে। যে দেশের সিংহভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চিন্তার সক্ষমতা আঠারো ছুঁতে পারেনি, সেই মানসিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র পরিচালিত হোক আমি তা চাই না। আমি গণতন্ত্র চাই, তবে তার আগে চাই মানুষ গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগের মানসিক সক্ষমতা অর্জন করুক।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
