
প্রকাশিত: Thu, Apr 27, 2023 3:00 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 6:58 PM
মিডিয়া ওয়াচ : প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকতা
আরশাদ মাহমুদ : আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সরকারি সফরে বর্তমানে জাপানে রয়েছেন। গত দু’দিন ধরে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এটাই সবচেয়ে বড় খবর। স্বভাবতই আমার কৌতূহল হলো জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলো এই সফর কীভাবে কাভার করছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, আমি নিয়মিত রাত দশটার এনএইচকে টেলিভিশনের ঘবংিষরহব সংবাদ বুলেটিন দেখি। প্রথম দিন ঘঐক টিভি এ সফরের কিছুই কাভার করেনি। তাই ভাবলাম পরের দিন অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ হাসিনার অফিসিয়াল মিটিং এবং সম্রাট নারীহিতর সঙ্গে বৈঠক এটা অবশ্যই এনএইচকে কাভার করবে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে কোনো খবর তারা প্রচার করেনি। ২৭ এপ্রিল সকালে গুগল সার্চ দিয়ে জানতে চাইলাম, জাপানি সংবাদ মাধ্যমগুলো, বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া কীভাবে শেখ হাসিনার এই সফরকে কাভার করছে।
সার্চ রেজাল্ট শুধু বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর দেখালো। এরপর আমি জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা অংধযর ঝযরসনঁহ এর ইংলিশ ভার্সন ওয়েবসাইটে গেলাম। এবং সেখানেও শেখ হাসিনার সফর নিয়ে দুই লাইনের কোনো সংবাদও দেখলাম না। আপনাদের মনে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন জাগতে পারে যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর জাপানি সংবাদ মাধ্যমগুলো কেন ইগনওর করলো। বলে রাখা ভালো, আমি ছয় বছর (১৯৯১-৯৬) অংধযর ঝযরসনঁহ এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ছিলাম। সত্যি কথা বলতে কী জাপানি নিউজ মিডিয়াগুলোর স্ট্যান্ডার্ড কোনোভাবেই পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম গুলোর থেকে কম না। রিয়েল প্রফেশনালিজম বা নিউজ কী এটা তারা জানে। উদাহরণস্বরূপ বলে রাখি, গত দুদিনে জাপানি সংবাদ মাধ্যমগুলো গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং জাপানি প্রধানমন্ত্রীর উপর যে হামলা হলো কিছুদিন আগে সেগুলো নিয়ে। আর ছিলো সুদানের গৃহযুদ্ধ এবং সেখান থেকে কীভাবে জাপানের নাগরিকদের সরিয়ে আনা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার সফর নিয়ে জাপানি সংবাদ মাধ্যমগুলো যেকোনো খবরই প্রচার করেনি এর একমাত্র কারণ হলো নিউজ মিডিয়াগুলোর কাছে এটা কোনোভাবেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নয়। কারণ জাপানে এক/দুই মাস পর পর বিভিন্ন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা সফরে গিয়ে থাকেন এবং এটা একটা রুটিন ব্যাপার। সেখানকার সংবাদ মাধ্যমগুলো শুধু সেই সব দ্বিপাক্ষিক সফরকেই গুরুত্ব দেবে যেখানে জাপানের স্বার্থ নিবিড়ভাবে জড়িত।
রুঢ় বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক জাপানিদের কাছে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ব্যাপারটা যদি সেরকমই হয় তাহলে সংবাদমাধ্যমগুলো সেটা কাভার করবে কেন। তবে শেখ হাসিনার সফর যদি প্রকৃতপক্ষে জাপানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতো, তাহলে সেটা তারা অবশ্যই কাভার করতো। সত্যি কথা বলতে কী বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের তেমন কোনো স্বার্থ জড়িত নেই। এই দুই দেশের সম্পর্ক মোটামুটি দাতা এবং গ্রহীতার। জাপান একটি বড় দাতাদেশ এবং বাংলাদেশ একটি বড় গ্রহীতা দেশ। এই দেওয়া-নেওয়া সম্পর্কের মধ্যে নিউজ ভ্যালু খুব একটা নেই। এ কারণেই জাপানি মাধ্যমগুলো শেখ হাসিনার খবর সম্পূর্ণভাবে ইগনোর করেছে।
এখন আপনারা চিন্তা করে দেখেন, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর অবস্থা। এদেশের সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো শেখ হাসিনার সফর নিয়ে যেরকম মাতামাতি করছে তাতে দেখে মনে হচ্ছে যে এরা সবাই সরকারি তথ্য-কর্মকর্তা এবং এরা কেউ সাংবাদিক না। এ পর্যন্ত আমি একটি সংবাদও দেখিনি যেটা আমার কাছে সত্যিকার অর্থে জার্নালিজম বলে মনে হয়েছে। যদি প্রকৃত সাংবাদিক হতো তাহলে তারা ওই সফরে কতজন গেছে, তাদের পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে এবং এর প্রাপ্তি কি ইত্যাদি জিনিসগুলো বিশদভাবে তুলে ধরতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই লেভেলের সাংবাদিকতা বাংলাদেশে আগেও ছিলো না, এখনও নেই। সাংবাদিক নামধারী এই দলবাজ, ধান্দাবাজ, চাটুকাররা সাংবাদিকতাকে এখন একটা সরকারি মাউথপিচে পরিণত করেছে।
আমি সবসময় একটা কথা বলে আসছি যে প্রকৃত সাংবাদিকদের কোনো সময়ই সরকারি আনুকূল্য বা দান-দক্ষিণা গ্রহণ করা উচিত না। এই চক্করে একবার পড়লে কোনো বিবেকবান সাংবাদিকের পক্ষেই আর সাংবাদিকতা করা সম্ভব হয় না। তখন তাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হয় ধান্দাবাজি করে নিজের আখের গোছানো। দুঃখজনকভাবে এটাই এখন বাংলাদেশের কালচারে পরিণত হয়েছে। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
