
প্রকাশিত: Fri, Dec 9, 2022 10:23 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 11:13 AM
স্বর্গীয় আনন্দের ফুটবলীয় এক ঝলক!
অঘর মন্ডল: মায়া, বিভ্রম, নাকি এটাই ফুটবলীয় আবেশ। হৃদয়ের আবেগ বলছে, এটা মায়া নয়, বিভ্রম নয়, এটা এক ঝলক র্স্বগীয় অনুভূতি। যার নাম ব্রাজিলীয় ফুটবল। গতি, ছন্দ, সঠিক পাস আর নিখুঁত ফিনিশিং। এ সবের মিশেলেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সৌন্দর্য। বাঙালির কাছে ফুটবল এক আবেগের নাম। ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ফুটবল মানে সৌন্দর্য। আর ব্রাজিল মানে সুন্দর ফুটবল। সেই সৌন্দর্যের পূজারি হয়ে তারা ফুটবলচর্চাকে উপসনার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ফুটবল ওদের কাছে শুধু খেলা নয়। ফুটবল একটা ধর্ম, সেটাকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই নাকি ফুটবল ঈশ্বর যুগে যুগে একেকজন ধর্মযাজককে পাঠিয়ে দেন ব্রাজিলে। পেলে, গ্যারিঞ্জা, জিকো, সক্রেটিস, রোমারিও, বেবেতো, কাকা, রোনালডো, রিভালদো তালিকাটা অনেক বড়। আর সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন নেইমার। কাতার বিশ্বকাপে নেইমার ম্যানিয়া শুরু হয়ে গেছে। ক্যামেরুনের কাছে হারের চিনচিনে যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ব্রাজিল শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামে কোরিয়নদের দৌঁড় লাফ-ঝাঁপ শুরুর আগেই গোল। সেই গোলের পাশে নেইমার নামের কোনো ফুটবলারের নাম ছিলো না। কিন্তু মাঝমাঠে যে তিনি ছিলেন ফিল্ডমার্শাল। সুপারসনিক গতিতে তিনি খেলাটার প্রান্ত বদল করে দিচ্ছিলেন। কখনও ডান দিক থেকে বা দিকে। কখনও বাম দিক থেকে ডান দিকে। পাশাপাশি নিজস্ব ফুটবলীয় স্কিলের মোহ-মায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন গ্যালারি থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের। আর ফুটবলের রাজসিংহাসনে সম্রাটের মুকুট মাথায় নিয়ে যিনি হাসপাতালে তিনিও একটা বার্তা পাঠিয়ে দিলেন ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়দের। বাবাকে দেওয়া কথা রাখার জন্য সব চেষ্টা করো। ভদ্রলোকের নাম পেলে। আবেগের দমকা হাওয়া যার জীবনের শৃঙ্খলাকে দুলিয়ে দিয়েছে হয়তো।
কিন্তু তাকে ছিটকে দিতে পারেনি। তার বড় কারণ, তার বাবার উপদেশ। আর বাবাকে দেওয়া তার কথা। সর্বকালের সেরার সিংহাসনে বসেও একটা আক্ষেপ আছে ভদ্রলোকের। কিছুদিন আগেও তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, হাজারের উপর গোল করেছি কিন্তু আমি আমার বাবার একটা রেকর্ড ভাঙতে পারিনি। যাকে নিয়ে একটা মিথ তৈরি হয়ে আছে, পেলে এক ডজ দুইবার দেন না। সেই তিনি ভাঙতে পারনেনি তার বাবার কী এমন রের্কড!’ আমার বাবা এক ম্যাচে পাঁচটা গোল করেছিলেন। তার সবগুলোই করেছিলেন হেডে। আমি কোনো ম্যাচে পাঁচটা গোল করতে পারিনি হেডে। সাউথ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল চারটা গোল করছে। কিন্তু তাদের কেউ একটার বেশি গোল করতে পারনে না। না, নেইমারও না। তার গোলটা এসেছে পেনাল্টি থেকে। নেইমার, রিচার্লিসন, ভিনিয়াস জুনিয়র। এরা কেউ একটার বেশি গোল করেননি। কিন্তু তাতে ব্রাজিলের জয়ে অন্য এক মাত্রা পেয়েছে। এই দলে গোল করার লোকের অভাব নেই। গোল উদযাপনেও আছে ভিন্নতা। সেই উদযাপনটাও দারুণ। একটা দল যখন একটা সুতোয় বাঁধা পড়ে তখনই ওরকম কিছু দেখা যায়। এই দলটা নাকি গোল কীভাবে উদযাপণ করবে, তারও প্র্যাকটিস করেছে। ব্রাজিলের গোল উদযাপনের মাত্রা কতটা সুন্দর এবং অন্যরকম আবেদন তৈরি করে, স্মরণীয় হয়ে থাকে, তার জন্য আপনাকে ফ্ল্যাশব্যাকে কাতার থেকে যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২২ থেকে ফিরে যেতে হবে ১৯৯৪-এ। নেইমার-রিচার্লিসন থেকে ফিরতে হবে দুই ফুটবল সাধক বেবেতো-রোমারিওর কাছে। একটু স্মৃতি হাতড়ে দেখুন বেবেতো গোল করে সদ্যজাত পুত্রকে সেই গোল উৎসর্গ করতে কীভাবে উদযাপন করেছিলেন। তার সঙ্গে কীভাবে যোগ দিয়েছিলেনন রোমারিও। এই হচ্ছে ব্রাজিল। গোল করা থেকে গোল উদযাপন। সব জায়গায় একটা শিল্পের ছোঁয়া। ব্রাজিল এবারও যদি কাপ নাও জিততে পারে, তারপরও আপনাকে কৃতজ্ঞতার সাথে বলতে হবে নিজের দেশ আর দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে প্রচুর আনন্দ দিয়েছে। কোর্য়াটার ফাইনালে এই ব্রাজিল পাচ্ছে গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে। সেই ম্যাচেও ব্রাজিলিয়ানদের মরণপণ সমর্পন সেই ফুটবলের কাছে। যা থেকে শিল্প আর সৌর্ন্দয ঠিকরে বের হয়। অমরত্ব দেয় সৃষ্টিশীলতাকে।
ব্রাজিলের এই দলের আরেকটা সংকল্প আছে। ব্যক্তি নয়; দলকে আগে রাখতে হব। ব্রাজিলিয়ানরা স্বার্থপর নয়। তারা দলগতভাবে জিততে চায়। সেটা ম্যাচ আর মানুষের মন। দুটোই। সমর্থকদের সঙ্গে আবেগ-প্রবাহে ভেসে যাবে গোটা দল একসাথে। উন্মত্ত উৎসবে মাতবে তাও একসাথে। কোচ তিতে সেই বার্তাটাও দিয়ে দিলেন কোরিয়া ম্যাচে। এবারের বিশ্বকাপে দলের সব ফুটবলারকেই মাঠে নামিয়েছেন তিনি। বুঝাতে চাইলেন ব্রাজিল কোনো ব্যক্তির উপর নিরর্ভশীল দল নয়। আর এই দলে কেউ ফুটবল ঈশ্বরের সাথে চুক্তি সই করে আসেননি, যে তিনি ব্রাজিলকে একা বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেবেন। ব্রাজিল মানে ফুটবলের রূপকথা নয়। বাস্তবতা। ফুটবল বিশ্বের দীর্ঘকালীন রাজত্ব করার ইতিহাস আছে। ফুটবল সভ্যতার প্রতি আছে আকণ্ঠ সমর্পন। আর আবেদন? দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত পর্যন্ত। তা না হলে শীতের রাতে বাংলাদশের কোনো প্রান্তিক জনপদে খোলা মাঠে কিংবা ঢাকার রাজপথে বড় পর্দায় খেলা দেখার জন্য হাজারো মানুষ জড়ো হবে কেন। কনকনে শীতের রাতে ব্রাজিল নামক আবেগের চাদর গায়ে চড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবেন কেন তাঁরা। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের আবেদন সমাজের উঁচু থেকে নিচু সব জায়গায়। জমানা বদলায়। ফুটবলারদের নাম বদলায়। কিন্তু বদলায় না ব্রাজলিয়ান ফুটবলের মুগ্ধতা।কাতারে সেই মুগদ্ধতা ছড়াতে শুরু করছে ব্রাজিল। নেইমারের প্রত্যার্বতন। ভিনিয়াসের প্রতিভা। রিচার্লিসনের অসামান্য দক্ষতা। বাকিদের ছোট ছোট পাস। সব মিলিয়ে স্বর্গীয় ফুটবলের এক ঝলক দেখলো বিশ্ব। তার রেশ এখনও আছে। কিন্তু বিশ্বকাপ? বিশ্বকাপে চুম্বন আঁকতে হলে এই ব্রাজিলকে অনেক দূর যেতে হবে। শুধু নে-ই-মা-র, নে-ই-মা-র আওয়াজ নয়। রিচার্লিসন ম্যানিয়া নয়। সঙ্গে লাগবে প্রার্থনা। ঈশ্বর যেন নিষ্ঠুর না হন। ফুটবল ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া বিশ্বকাপ কেউ কখনো জিতেছে না কি। তবে ফুটবলই পারে স্বপ্নহীনকে স্বপ্ন দেখাতে। ব্রাজিলিয়াদের স্বপ্নের আকাশে কিন্তু রঙের মেঘ জমতে শুরু করছে। লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
