
প্রকাশিত: Tue, Dec 13, 2022 5:27 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:50 PM
মরণ-সাগর পাড়ে তোমরা অমর
অজয় দাশগুপ্ত, সিডনি থেকে
পরাজয়ের পূর্বে তারা চূড়ান্ত আঘাত হানে স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার অভিপ্রায়ে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকে বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত যেসব বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে আমরা হারিয়েছি, তাঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন প্রমুখ।
প্রথম আলো বলছে, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীর বিচার ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এটি জাতির জন্য স্বস্তিকর। কিন্তু দুটি কারণে এই বিচার অসমাপ্ত রয়ে গেছে। প্রথমত, সব বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার হয়নি। আবার যেসব হত্যার বিচার হয়েছে, দণ্ডিত সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষ করে আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তিপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা প্রয়োজন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের দিনটিতে আমরা তাঁদের স্মরণ করি। সরকার রাজনীতি জনতা সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কিন্তু আমরা বারবার ভুলে যাই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা নীলনকশার ঘৃণিত খলনায়ক চৌধুরী ম ঈনুদ্দীন বহাল তবিয়তে বাস করছে লন্ডনে। এখনো তার চক্রান্ত বহাল আছে। বিশেষ করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় এদের কু-কর্মের নমুনা দেখেছি আমরা। লন্ডন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনিবার্য এক অংশ। কূটনীতি রাজনীতি জনগণ সব মিলিয়ে একাত্তরে বিলেত দেশটি ছিল আমাদের গর্বের উৎস। এখন এর পাশাপাশি দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদেরও ঘাঁটি। একদিকে রাজাকার দালালেরা অন্যদিকে বিএনপির যুবরাজের অবস্থান। সব মিলিয়ে লন্ডন বা বিলেত এক অগ্নিগর্ভ প্রবাস। মানবাধিকারের নামে ইংল্যান্ড চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে ফেরত দিতে চায় না। অথচ দুনিয়ার ইতিহাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মতো অমানবিক ঘটনা খুব কম। যে মানুষেরা ঠাণ্ডা মাথায় বাড়িতে গিয়ে অধ্যাপক জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন বা শিল্পী সুরকার আলতাফ মাহমুদের মতো মানুষকে ধরে নিয়ে যায়, তাদের হত্য করে, এসব খুনিদের কীভাবে মানবাধিকারের নামে বাঁচতে দেওয়া যায়? বিশেষ করে গণতন্ত্রের সুতিকাগার নামে পরিচিত ইংল্যান্ড যখন এমন কাজ করে আমরা বিস্মিত ও হতাশ হবার বিকল্প দেখি না। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য কতটা আছে জানি না। কারণ দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো বহু আগেই আমাদের নীতি আদর্শকে মাটি চাপা দিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের আদর্শ চেতনা এখন খাতা-কলমে। বিএনপি করতে হয় বলে হয়তো দিবসটি স্মরণ করে। কিন্তু কোনো দলের কি আসলেই এর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা আছে? বা খুনিদের বিচারের দায়? থাকলে যে কী ঘটতো তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তাই বলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস থেমে থাকবে না। একবার ইতিহাস যখন তার রায় দিয়ে দেয় তখন কারও সাধ্য নেই তাকে বদলাতে পারে ? ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৪ ডিসেম্বর অনিবার্য ইতিহাস। বেদনার নীল রঙে ছোপানো রক্ত লাল এক ইতিহাস।
এটা বলতেই হবে, নিকট অতীতে বা বর্তমানেও বাংলাদেশে খুনোখুনির কমতি নেই। প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে মানুষের অপমৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা। রাজনীতির শিকার অপরাজনীতির বলি মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে আমাদের আশঙ্কা, উদ্বেগ আর শোকের জায়গাও ম্লান হয়ে গেছে হয়তোবা। মৃত্যু বোধকরি মানুষকে তেমনভাবে আন্দোলিত বা শোকার্তও করে না। কিন্তু ইতিহাস এমন শক্তি যার আলো জাতি ও দেশকে পথ দেখায়। যে মানুষগুলোর রক্তে আমরা এই দেশ পেয়েছি মানুষ ভুলে যেতে পারলেও মাটি পতাকা সংগীত তাঁদের ভুলবে না। এই উপাদানগুলো কথা বলে না বটে কিন্তু তাদেরও ভাষা আছে। যেকোনো সংকট বা ক্রান্তিকালে তার পরিচয় দেখতে পাই আমরা। এদেশে ভারত বিরোধিতার নামর সংখ্যালঘু বিদ্বেষের নামে রাজাকার গোষ্ঠী দালালেরা যতো চেষ্টাই করুক না কেন, শহিদের মাটি তাদের চক্রান্ত সার্থক হতে দেয়নি, দেবে ও না। যার কারণে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আমরা পেয়েছি জাহানারা ইমামের মতো নারীদের ।
আজ আমরা যাঁদের কথা বলছি, লিখছি তাঁদের কেউ যুদ্ধ করতে জানতেন না। তাঁদের একজনও অস্ত্র চালনা শেখেননি। তাঁদের কারো কোনো ট্রেনিংও ছিল না। কিন্তু তাঁদের ছিল মগজের মতো ধারালো অস্ত্র। কারো হাতে ছিল কলম, কারো বাঁশি, কারো তুলি। তাঁরা সকলেই ছিলেন নরম মনের মাটির মানুষ। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী আর দালালেরা ঠিক জানতো এঁরা কতটা অভ্রভেদী আর কতটা কার্যকর। এঁদের মেধা আর মনন কাজে লাগিয়ে স্বাধীন দেশটি যে তরতর করে বেড়ে উঠবে এও টের পেয়েছিল তারা। তাই রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখে কাপড় বেধে হত্যা করেছিল তাঁদের। হয়তো ভেবেছিল যাঁকে হত্যা করেছি তিনি যখন দেখেননি আমাদের দেখবে কে? মূর্খরা জানতো না, সত্যের চোখে কাপড় বা ঠুলি পরানো যায় না। আমরা জানি কারা এই নরপশু, ইতিহাস জানে কারা এই দেশবিরোধী মাতৃহন্তারক পিশাচ। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সমৃদ্ধি আর বড় হয়ে ওঠার গর্ব যখন আমাদের বুক ভরিয়ে দেয় তখন আমরা যেন ভুলে না যাই, এঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন বলে আমরা মুক্তমানব হতে পেরেছিলাম। আজ যখন বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা হরণ হয় বা যখন দেখি অন্ধকারের শক্তি আলোকে আবার গ্রাস করছে, তখন নিজের লেখা কবিতার দুটো লাইন মনে পড়ে, ‘এ দেশেতেই বসত করে লিখছো গদ্য পদ্য তুমি/চোখের তারায় জাগিয়ে রেখো রায়েরবাজার বধ্যভূমি’। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস চির জাগরূক থাকুক বাঙালির মননে । লেখক ও কলামিস্ট
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
