প্রকাশিত: Sat, Jul 8, 2023 10:00 AM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 10:20 AM

নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল স্টাডি করে সেই আদলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করুন

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন : ‘বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে আসতে নানা উদ্যোগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের’ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২ হাজার ২৪৯টি কলেজ আছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০০টি কলেজে বিএ/বিএস অনার্স পড়ানো হয়, যার মধ্য থেকে ১৪৫টি কলেজে মাস্টার্সও পড়ানো হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়ন করা মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ লাখেরও বেশি। কী বিশাল এর কলেবর বুঝতে পারছেন? এখন প্রশ্ন হলো এই ৮০০ শতাধিক কলেজের মান কেমন? একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অনার্স পড়ানো হয় সেখানে শিক্ষকদের শিক্ষাগত ন্যূনতম যোগ্যতা কেমন হওয়া উচিত? ন্যূনতম যোগ্যতা হওয়া উচিত পিএইচডি। এই ৮০০ শতাধিক কলেজে মোট কতজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী আছে? বিএ/বিএস পর্যায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত মাস্টার্স পাস শিক্ষকরা পড়াতে পারে। সমস্যা নেই। কিন্তু তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষে পড়াতে হলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী লাগে। পিএইচডি ডিগ্রিধারী কেন? কারণ মাস্টার্সের পর ৪ থেকে ৬ বছর একজন সুপারভাইজরের অধীনে গবেষণা করলে বিষয়ের অনেক গভীরে ভাবার সুযোগ হয়, প্রয়োজন হয়। তাছাড়া লেখাপড়া বিশেষ করে গবেষণা একটি একটি গুরু বিদ্যা। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক/গবেষকের অধীনে থাকলে লেখাপড়ার বাহিরে জীবনাচার সম্বন্ধেও জানাবোঝা হয় এবং পঠিত বিষয়ের ওপর একটি পার্সপেক্টিভ জন্মায় যা পড়াতে গেলে কাজে লাগে। 

আর ১৪৫টি কলেজে যেখানে মাস্টার্স পড়ানো হয়, সেখানে কতজন শিক্ষকের পিএইচডি আছে? কতজন সেখানে অ্যাক্টিভ গবেষক আছেন? মাস্টার্স সাধারণত থিসিস ও এক্সপেরিমেন্ট এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। মাস্টার্স লেভেলে পড়াতে হলে শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি থাকা একান্ত আবশ্যক। একটু খোঁজখবর নিলে জানতে পারবেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো কলেজগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা মারাত্মক। যেই সংখ্যক শিক্ষক আছে তাদের উচ্চ মাধ্যমিক, বিএস (পাস), বিএস অনার্স ও মাস্টার্স পড়াতে হয়। এই অতি স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে এসব কোর্স সঠিক পড়ানো প্রায় অসম্ভব। এই ‘নেক্সট টু ইম্পসিবল’ কাজটিই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যুগের পর যুগ ধরে করে শিক্ষার মানের ১২টা বাজাচ্ছে। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কিছুটা ভালো করার জন্য সু ঃড়ি পবহঃং মূল্যের পরামর্শ দেওয়ার একটু চেষ্টা করছি। অধীত কলেজের সংখ্যা কমান। এত এত কলেজে অনার্স মাস্টার্স পড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। অধিকাংশ কলেজে সর্বোচ্চ ২ বছরের বিএ/বিএস (পাস) ডিগ্রি পড়ান। আমাদের সময়ে স্কুল লেভেলের সেরা শিক্ষকরা বিএসসি শিক্ষক ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা বিএ/বিএস (পাস) করুন। তারপরের লেভেলে বিশেষ কিছু সংখ্যক কলেজে বিএ/বিএস অনার্স পড়ানোর অনুমতি দিন এবং নিশ্চিত করুন সেই কলেজগুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক আছে যাদের মধ্যে অনেকের পিএইচডি ডিগ্রিও আছে। প্রয়োজনে পিএসসির মাধ্যমে স্পেশাল বিসিএস নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দিন এবং তাদের উচ্চ পদ এবং ভালো সুযোগ-সুবিধা দিন। 

তারপর সেই কলেজগুলো থেকে বেছে বেছে আরও কমসংখ্যক কলেজকে মাস্টার্স পড়ানোর সুযোগ দিন এবং নিশ্চিত করুন সেই কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকের পিএইচডি আছে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে মাস্টার্স পড়ানোর ব্যবস্থা করুন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া একদম বন্ধ করে দিন। যেদিন থেকে স্পষ্ট হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সত্যিকারের মানসম্পন্ন গবেষণা করছে সেইদিন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। 

নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলটা একটু স্টাডি করে দেখে সেই আদলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করুন, দেখবেন ভালো ফল পাবেন। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিতে ছাত্র ভর্তি করছে আমার বোধগম্য না। এটা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে নর্থ সাউথ, ব্র্যাক ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়কেও যেখানে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয় না সেখানে, কোন যুক্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রি দিতে পারে?

 লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়