
প্রকাশিত: Sat, Jul 8, 2023 10:14 AM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 1:03 PM
তামিম ইকবাল, আমরা তোমাকে ভালোবাসি
ইমতিয়াজ মাহমুদ : [১] সেদিন ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের সুচনার ম্যাচটায় জয়ের পথে আনন্দে আমাদের চোখে জাল এনেছিলো যে ছোট ছেলেটা বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে আবার কাঁদিয়ে গেলো সে, আমাদের সোনার ছেলে তামিম ইকবাল। নিজের বয়স বেড়েছে সে তো মাঝে মাঝেই উপলব্ধি করি, কিন্তু আমাদের তরুণ তারকারা যে কবে কবে বড় হয়ে নিজের নিজের ক্ষেত্রে একেকজন মহীরুহে পরিণত হয়ে গেছে, সেটার আর লক্ষ্য থাকে না। তামিম ইকবাল বলতেই তো আমার চোখে ভাসে সেই বাচ্চা ছেলেটা, যে কিনা ২০০৭ সালে পোর্ট অফ স্পেনে বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটাতে দুইটা ছয় আর সাতটা চারে ৫৩ বল খেলে ৫১ রান করে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গেঁথে দিয়েছিলো।
আপনাদের কার কার সেই স্মৃতি মনে আছে জানি না, আমি তো বুকের মধ্যে সাজিয়ে রেখেছি সেই ইনিংসটি। সেদিন চোখে জল এসেছিলো আনন্দে, আর এখন ছেলেটি বিদায় নিচ্ছে। জাতীয় দলে খেলতে আসার আগেই ওরা নজর কেড়েছিলো। দুই ভাই একসঙ্গে খেলত ওরা, তামিম আর নাফিস। নাফিসও অনেক সম্ভাবনাময় একজন ক্রিকেটার ছিলো, কিন্তু জাতীয় দলে আসনটা আর স্থায়ী করতে পারেনি নানা কারণে। তামিম অপরদিকে দিনে দিনে পরিপক্ক হয়েছে, একসময় আমাদের জাতীয় দলের অপরিহার্য ক্রিকেটারে পরিণত হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে সেই খেলাটার আগেই তামিম জাতীয় দলে ঢুকে পড়েছিলো। তবু বিশেষ করে সেই খেলাটার কথা বলছি তার কারণ সেই ম্যাচটাতেই যেন সেদিনের ছোট ছেলেটি একটি জাতির ক্রিকেটীয় আশা ভরসার ধারক বাহকে পরিণত হয়েছিলো।
[২] তামিম সম্পর্কে নিউজ পেপারে আপনারা অনেক লেখা পড়বেন। সকলেই লিখবেন নানা কথা, কী করে ছোট ছেলেটা এতো বড় হয়েছে, ওর খেলার পরিসংখ্যান ইত্যাদি নানা কিছু। আমি সেইরকম বিশেষজ্ঞ কেউ না, আমি তো আমাদের খেলোয়াড়দের বিচার করতে পারি না। আমি কেবল জানি আমার পতাকা বইবার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলো ছেলেটা, আমি তো কেবল ভালোবাসার কথা বলতে পারি। সবসময় ওরা জিততে পারেনি, সবসময় ওরা ভালো খেলতেও পারেনি। তাতে কি হয়েছে? এইটাই তো জীবন, জয়-পরাজয় সে তো পায়ের ভৃত্য, লড়াই করে যাওয়াটাই হচ্ছে সাফল্য। তামিম তো আমাদের সেই লড়াকু ছেলেটা।
আর লড়াইটা সে করেছে মাথা উঁচু করে পরম স্পর্ধায়। ওরা হচ্ছে আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়। এজন্য ওদের আচরণে ‘ছোট দল বা দ্বিতীয় সারির দলের খেলোয়াড়’ এইরকম কোনো হীনমন্যতা ছিলো না। সকল ক্রিকেট খেলুড়ে জাতির সঙ্গে সমান মর্যাদায় সমান সাহস আর সমান মর্যাদা নিয়ে। ব্যক্তিগত দক্ষতার কথা যদি বলেন, আমি মনে করি তামিম ইকবাল হচ্ছে আমাদের সেইসব কয়েকজন খেলোয়াড়ের একজন যে কিনা যেকোনো দেশের যেকোনো ক্রিকেট দলে জায়গা করে নেওয়ার যোগ্যতা রাখে। বাংলাদেশে না জন্মে অন্য কোনো দেশে জন্মালেও এই ছেলে ঠিকই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতো।
কবে কবে যে ছেলেটা এত বড় হয়েছে টেরই পাইনি। তামিম যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় ঘোষণা করেছে, ২০০৭ সালের ১৭ মার্চের মতোই চোখে জলে এসেছে আমাদের, বাংলাদেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের। এতোগুলো বছর কেটে গেছে, এর মধ্যে সবসময় আমরা ওর প্রতি সমান সদয় ছিলাম না। অনেক সময় কটু কথাও বলেছি অনেকে। এইটাই নিয়ম। মানুষ ফলবান বৃক্ষেই ঢিল ছুড়ে মারে, নিষ্ফলা বৃক্ষে নয়।
[৩] বিদায়ের দিনে আমাদের প্রিয় তামিম ইকবালের প্রতি কেবল নিরেট ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই। যে কয়টা অহংকারের মুহূর্ত এই হতভাগা জাতির ভাগ্যে এসেছে তার অনেকগুলোতেই তোমার হাত ছিলো। এই জাতি তোমায় কখনো ভুলবে না, মনে রাখবে পরম ভালোবাসায়। আমরা তোমাকে ভালোবাসি তামিম ইকবাল। এই ভালোবাসা তুমি অর্জন করেছ। মনে রাখবে এই কথাটা। জয় হোক, আনন্দ হোক।
লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
