
প্রকাশিত: Mon, Aug 7, 2023 11:26 PM আপডেট: Mon, Sep 25, 2023 6:24 PM
শিশুদের মধ্যে বৈষম্য দূর করাটাই সমাজের অগ্রযাত্রার প্রথম ধাপ
ইমতিয়াজ মাহমুদ, ফেসবুক থেকে: শিশুর চোখে জল সহ্য করতে পারি না, উপেক্ষা করতে পারি না, এড়িয়ে যেতে পারি না। কেন না মানব সভ্যতার সবচেয়ে অপূর্ণ দিক এটা- শিশুর চোখে জল। কোন রাষ্ট্র বা সমাজ নিজেদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সফল বা উন্নত বা আধুনিক বলতে পারে না যতদিন পর্যন্ত সেদেশের বা সেই সমাজের একটি শিশুর চোখেও জল থাকবে। আমি অতো জ্ঞানী মানুষ নই, তথাপি আমি বলতে পারি যে পৃথিবীর অনেক কিছুই আমি জানি, বুঝি, ব্যাখ্যা করতে পারি। এই একটা জিনিস আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না, রাষ্ট্রসমুহ কেন ওদের সকল শক্তি সকল সম্পদ সকল প্রচেষ্টা শিশুদের জন্যে ব্যয় করবে না?
না। এটা এমনিই কথার কথা বলছি না। আপনার কাছে আমি প্রশ্ন করি- একটা রাষ্ট্রে যতক্ষণ পর্যন্ত একটা শিশু অভুক্ত থাকবে, বা স্কুলে যেতে পারবে না বা অসুখ হলে চিকিৎসা পাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কী করে রাষ্ট্রের সম্পদ অন্য কোন খাতে ব্যয় করবো? শিশুকে অভুক্ত রেখে আপনি স্টেডিয়াম বানাবেন? তিয়েতার বানাবেন? বড় বড় দালান কথা সেতু বা ঐসব বানাবেন? আসমানে রকেট মারবেন? প্রতিটা শিশুর জন্যে যতক্ষণ আনন্দদায়ক স্কুলের ব্যবস্থা না হবে ততক্ষণ আমি অন্য কাজ কেন করবো? প্রতিটা শিশুর জন্যে যতক্ষণ আনন্দদায়ক হাসপাতাল না হবে ততক্ষণ আমি অন্য কাজ কেন করবো?
আমি সমাজতন্ত্র কখন চাইতে শুরু করেছি জানেন? যখন জেনেছি যে সোভিয়েত ইউনিয়নে, যুগোস্লাভিয়ায়, পূর্ব জার্মানিতে ঐসব দেশে শিশুদের মধ্যে বৈষম্য নেই। সুপার স্ট্রাকচার বেসিক স্ট্রাকচার সংস্কৃতি অর্থনীতি রাজনীতি বস্তুবাদ দ্বন্দ্ব দর্শন এইসব পরে শিখেছি। যখন জেনেছি যে এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব যেখানে শিশুদের মধ্যে বৈষম্য নেই সেদিনই আমি জেনেছি যে সেইরকম সমাজ গড়ার জন্যে লড়তে হবে। কেননা আমি বৈষম্য দেখেছি- সে বড় কঠিন বৈষম্য- আমারই ক্লাসে আমার বন্ধু স্কুলে আসতো ক্ষুধার্ত পেটে। এরকম কেন হবে? পিতামাতার কারণে শিশুদের মধ্যে বৈষম্য কেন হবে?
একই দেশে একই সমাজে একই সময়ে একটি শিশু আধুনিকের চেয়ে আধুনিক শিক্ষা লাভ করবে, পুষ্টিকর খাবার খাবে, বিশাল টেলিভিশনে কার্টুন দেখবে আর আরেকটি শিশু রাস্তায় ভিক্ষে করবে এর চেয়ে অশ্লীল আর কি হতে পাবে। এর চেয়ে কুৎসিত দৃশ্য আর কি হতে পারে? একটি শিশুর পিতামাতার বৈষয়িক অবস্থা যাই হোক, শিশু তো শিশুই। প্রতিটা শিশুই রাষ্ট্রের শিশু- রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব হচ্ছে শিশুটির আনন্দময় জীবন নিশ্চিত করা, আর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রকে শিশুর বাসযোগ্য করা। যে রাষ্ট্র শিশুর অন্যে আনন্দদায়ক নয় সেটা আবার কিসের রাষ্ট্র!
যে সমাজ শিশুদের মধ্যে বৈষম্য করে সেরকম সমাজ দিয়ে আমি করবো? এইরকম সমাজ তো ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া দরকার। ভেঙে ফেলা দরকার যাতে করে সেখানে আমরা একটা নতুন সমাজ গড়তে পারি- আমাদের স্বপ্নের সমাজ। এর আগেরবার সমাজতান্ত্রিক সমাজগুলি যেরকম ছিল তার চেয়েও উন্নত, তার চেয়েও আধুনিক ও শশীর জন্যে তার চেয়েও আনন্দদায়ক সমাজ নির্মাণ করবো আমরা। এইটাই প্রত্যয়। এই প্রত্যয় যাদের নাই ওদের সাথে আমার কোন লেনদেন নাই, কোন ভাব সংশ্লিষ্টতা নাই। কেননা শিশুদের মধ্যে বৈষম্য দূর করাটাই হচ্ছে যে কোন সমাজের ও রাষ্ট্রের সম্মুখপানে যাত্রার প্রাথমিক ধাপ।
এই কথাটা আরেকবার বলি- শিশুদের মধ্যে বৈষম্য দূর করা এইটাই হচ্ছে সমাজের অগ্রযাত্রার প্রথম ধাপ। যারা শিশুদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার কথা যারা বলেন না, সেই লক্ষ্যে যারা কাজ করেন না, ওরা আমার কেউ না।
আরও সংবাদ
‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ বাস্তবায়নই বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির পথ
পুলিশ প্রধানের ক্ষমতার দাপট, কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকার সাংবাদিকতা?
নিছক একটি গায়েবি গল্প
শিশুদের মধ্যে বৈষম্য দূর করাটাই সমাজের অগ্রযাত্রার প্রথম ধাপ
একাত্তরের ৬ আগস্ট, আমাদের দেশান্তর যাত্রার দিন
চাকরিতে গ্রাম এবং শহরের শিক্ষার্থীদের মিশ্রণ ঘটাতে পারলে দেশ এগিয়ে যেত

‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ বাস্তবায়নই বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির পথ

পুলিশ প্রধানের ক্ষমতার দাপট, কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকার সাংবাদিকতা?

নিছক একটি গায়েবি গল্প

শিশুদের মধ্যে বৈষম্য দূর করাটাই সমাজের অগ্রযাত্রার প্রথম ধাপ

একাত্তরের ৬ আগস্ট, আমাদের দেশান্তর যাত্রার দিন
