প্রকাশিত: Wed, Dec 14, 2022 3:10 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:43 PM

আলভারেজ, ‘বিক্রমাদিত্য’!

আহসান হাবিব

খেলা দেখে আনন্দ পাওয়াই আমার লক্ষ্য, কোনো বিশ্লেষণ করা নয়। কেননা আমি ফুটবল বিশেষজ্ঞ নই। আমি ৮৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ দেখে আসছি, সঙ্গে স্প্যানিশ, ইউরোপীয়, ল্যাটিন ফুটবল। বলে রাখি পৃথিবীতে যতো খেলা আছে, ফুটবল আমার সবচেয়ে প্রিয়। প্রেয়সীর সাথে কথা বলা ছাড়া রাত জাগি শুধু এই ফুটবলের জন্য। সে যাক গে। আর্জেন্টিনা ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দেখতে বসে ক্রমশ আশ্চর্য হচ্ছিলাম এই ভেবে যে, এ কোন আর্জেন্টিনা? আজ পর্যন্ত কোনো ম্যাচ এভাবে খেলতে দেখিনি। দেখলাম তাঁরা নিজেদের পায়ে বল রাখার কৌশল পরিত্যাগ করেছে, মাঝমাঠ ছেড়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়ার হাতে। এদিকে ডিফেন্সকে করে তুলেছে দুর্ভেদ্য। 

ফলে ক্রোয়েশিয়া বল দখলে রেখেছে অনেক বেশি। নিজেদের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া করেছে, কিন্তু গোলপোস্টে অ্যাটাক বলতে যা বোঝায় তা করতে পারেনি। এরই ফাঁকে বল পেয়ে ডিফেন্স থেকে সোজা ক্রোয়েশীয় হাফে, বল পেয়েই আর্জেন্টিনা কাউন্টার অ্যাটাক। কাউন্টার অ্যাটাক? কখনো দেখিনি আর্জেন্টিনা এই কৌশল নিয়েছে। কেন হঠাৎ এই কৌশল? এটাই সম্ভবত সেই ট্যাক্টিস যা একজন কুশলী কোচ নিয়ে থাকেন। লক্ষ্য করলাম প্রতিটি ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। প্রথম ম্যাচে তাঁরা হেরেছে নিজেদের অর্ধে খেলে, তাঁরা এটাকিংয়েই যায়নি। কিন্তু পরের দুই ম্যাচ বদলে ফেলেছে।

ফলে তারা জয় পেয়েছে। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দ্বিতীয় হাফে তাঁরা ডিফেন্সিভ থেকেছে, ফলে গোল খেয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে ঠিকই এটাকিং ভূমিকায় অবতীর্ণ, ফলে নেদারল্যান্ডস কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। টাইব্রেকারে জিততে হয়েছে। 

বল দখলের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া অনেক এগিয়ে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। আর্জেন্টিনা তাদের নিজেদের মধ্যে খেলতে দিয়েছে এবং সুযোগ পেয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গেছে। আর মেসি ছিলো কালকে একজন রাজার মতো, সারাক্ষণ মাঠে রাজকীয় হাঁটাহাঁটি করেছে। কিন্তু বল যখনই পেয়েছে, কিছু একটা করেছে। তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া কঠিন, সে ঠিক তাঁর পাসটা সঠিক কাউকে দেবেই। ম্যাচে ফুটবল মুহূর্ত বলতে আমার কাছে মেসির সেই দুর্দমনীয় পাসটাকেই মনে হয়েছে। যে দক্ষতা এবং গতিতে মেসি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে ছিটকে, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় দাঁড়ানো আলভেরাজকে ঠেলে দিলে আলভেরাজ আলতো টোকায় গোলটা দিয়ে ফেলে, তা সত্য অনির্বচনীয়। 

আর দ্বিতীয় গোলটি সত্যিই অসাধারণ। আলভারেজ যেন বিক্রমাদিত্য। যারা বল পজিশনে পিছেয়ে ছিলো বলে আর্জেন্টিনাকে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে রাখছেন, তাঁরা হয়তো খেলায় নেওয়া আর্জেন্টাইন কোচের দর্শনটা বুঝতে পারেননি। সত্যি কথা আমিও বিরক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন ভাবছি কোচের এই কৌশল নির্ভুল ছিলো। আর ফুটবল তো গোলের খেলা, সেটা পাওয়ার জন্য যা করার দরকার, তাই করে সফলতা পেলে আর কী লাগে। ফলাফলের পর ‘যদি’ কোনো কাজে আসে না। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। লেখক : ঔপন্যাসিক