রেজা ঘটক

খেলার মোটিভ বুঝতে ফিফার লেগেছে ৩৩ মিনিট। তারপর সেই ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ। যেকোনো উপায়ে আর্জেন্টিনা একটা বল ডি-বক্সে আনতে পারলেই ওটাকেই পেনাল্টি দিয়ে দাও। ক্রোয়েশিয়ার মনোবল ভেঙে চুরমার করে দাও। পুরো ৩৩ মিনিটে আর্জেন্টিনা বল পেয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। রোহিঙ্গা রেফারির কাজ হলো মাঠে ফিফার নির্দেশ এক্সিকিউট করা। সেই সুযোগে আর্জেন্টিনাকে একটা পেনাল্টি উপহার দেওয়া হলো। ব্যাস আর যায় কই। একটা গোল পেয়ে আর্জেন্টিনা কিছুটা চাঙা হলো। তারপর মনোবল ভাঙা দলকে ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করা যায়। সেই সুযোগে দ্বিতীয় গোল। 

এবারের বিশ্বকাপে দুইটা জিনিস আমার মোটেও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালো লাগে নাই। একটা হলো খুব বাজে রেফারিং। দ্বিতীয়টা হলো ভুয়া ভিএআর অফসাইড। একটা সুন্দর ফুটবল খেলা নষ্ট করার জন্য যেসব ক্ষেপণাস্ত্র দরকার ফিফার পকেটে তা আছে। তার পছন্দের দলকে সেই সুবিধা দিয়ে আশীর্বাদ করে ফিফা। ফিফা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থার একটি। কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক হয়েছিল বিশাল অঙ্কের ঘুষ দিয়ে। তারপর কাতারের সকল অপকর্মকে ফিফা জায়েজ করেছে। ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত গোটা ১২ বছরে কাতারের কয়েক হাজার গরিব শ্রমিক মারা গেছে সেফটি ব্যবস্থা না থাকায়। কাতার মৃত শ্রমিকদের কোনো ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত দেয়নি। ফিফা যেহেতু কাতারের কুকর্ম হালাল করেছে। অতএব কাতারকে বাঁচানো ফিফার কাজ ছিলো। 

ফিফার প্রেসিডেন্টের উদ্ধোধনী ভাষণে কাতারকে জবাবদিহি চাওয়ার কথা, সেখানে তিনি উল্টো কাতারকে বাহাবা দিয়েছেন। কোথায় জ্যাক ওয়ার্নার? বিলিয়ন ডলার ঘুষ খেয়ে কাতারকে বিশ^কাপ আয়োজক বানানো ওয়ার্নার? ফিফার সাথে কোনো দেশ লাগতে গেলেই ফিফা তাকে দেখে নেয়। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল দুটি দেশ জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। ফিফা তাদের কীভাবে কিকআউট করেছে, সবাই দেখেছে। কিন্তু নিজেদের পছন্দের দলের সুবিধার কথা বিবেচনায় সবার মুখেই কুলুপ। কারণ ফিফা আর এই সুবিধাপ্রাপ্তরা তো একই দলের গোসাই। ফিফার মিশন ছিলো এবার ব্রাজিলকে হেক্সা দেওয়া। কারণ ২০০২ সালের পর ব্রাজিল আর ফাইনালেই উঠতে পারেনি ২০ বছর। 

ফিফার সেই প্ল্যান ক্যামেরুন আর মরক্কো দুই আফ্রিকান সিংহ ভেঙে দিছে। তখন ফিফা দেখল এবার প্ল্যান-বি কার্যকর করা দরকার। শুরু হলো আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে প্ল্যান-বি কার্যকর। যে কারণে ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে আউট করার জন্য বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে রেফারিং দেখলো বিশ্ববাসী। আর্জেন্টিনাকে বেশি কার্ড দেওয়ার রহস্য হলো যাতে সবাই মনে করে রেফারি নেদারল্যান্ডসের পক্ষে। ওটা আদতে ফিফার একটা ধুর্ত কৌশল। তারপর সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ৩৩ মিনিটে আবার ফিফার কুনজর সেই ভুয়া পেনাল্টি। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে ফিফা দেখলো এই দুর্বল আর্জেন্টিনাকে একটু পেছন থেকে সহযোগিতা না করলে ওরা বেশিক্ষণ টিকবে না। লাগাও ব্রহ্মাস্ত্র। দিয়ে দাও পেনাল্টি। তারপর তো মনবল ভাঙা দলটি বুঝে গেছে জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা যাবে না। কারণ মাঠে আর্জেন্টিনা থাকলেও কার্যত ক্রোয়েশিয়া লড়াই করেছে ফিফা+আর্জেন্টিনার ১১ জনের বিপক্ষে। ব্যাস এই হলো ইতিহাস। খেলার স্টাটিসটিক্স হলো, ক্রোয়েশিয়া ৬১ শতাংশ বল দখলে রেখেছে। আর ৩৯ শতাংশ বল দখল নিয়ে ফিফার সুযোগ্য আশীর্বাদ নিয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালে। লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। ফেসবুক থেকে